উদ্ভাস

১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, অক্টোবর ২০১২

উদ্ভাস - ১ম বর্ষ ২য় সংখ্যা, অক্টোবর ২০১২

সম্পাদকীয় : উদ্ভাস


দেখতে দেখতে শরৎকাল হাজির, বাতাসে আগমনীর সুর ছড়িয়ে ।“শরত তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি….” –শরতের আলো প্রতিভাত হোক আপনার আমার সকলের জীবনে। দ্বিতীয় সংখ্যার উদ্ভাস প্রকাশের শুভলগ্নে আপনাদের সবাইকে জানাই শারদীয়ার আগাম প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।যাযাবরের অনুকরনে আমরাও বলতে পারি,বেগের সাথে সমানুপতক হারে উদ্বেগও বেড়েছে।যণ্ত্র সভ্যতা আমাদের যতটা না ব্যস্ত রেখেছে, ব্যাতিব্যস্ত করে রেখেছে অনেক বেশী। আজ সবার মুখে একই কথা, “হাতে যে একদম সময় নেই।“ লোক-লৌকিকতার সময় নেই, পরিজনের সাথে দুদন্ড কথা বলার সময় নেই, শখ পূরণের সময় নেই, শল্প চর্চা, কাব্য চর্চা, সাহিত্য চর্চা, যে সেখনে অবহেলিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবুও কেউ কেউ তারই মাঝে মনের ভাব কলমের আঁচড়ে, অক্ষরের সুষম বি ন্যসে সাদা কাগজের বুকে এঁকে যান, এভাবেই সৃষ্টি হয় কখনো কবিতা, কখনো গল্প, বা আত্মকাহিনী, নিবন্ধ,l প্রবন্ধ, উপন্যাস, ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের রচনা। অনেকে লিখতে না পারলেও মনের খিদে মেটান চোখের বাতায়নপথে এই সব মনিমুক্তার রসস্বাদনে।তাই বর্তমানকালের কবি লেখক সাহিত্যিকরা কি ভাবছেন, কি লিখছেন সে কথা ছাপার অক্ষরে আস্বাদনের জন্য উন্মুখ থাকেন সাহিত্যপ্রেমী আগ্রহী পাঠকেরা।এদের খবর যদি কেউ জানাতেই না পারে তাহলে সাহিত্যপ্রেমীদের সাহিত্যসেবার সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ।সাহিত্য পত্রিকার পাশাপাশি বাংলা ই-ম্যাগজিন, ব্লগাজিনগুলোই বা তাহলে তাঁদের চাহিদা মিটানোর ক্ষেত্রে পিছনে পড়ে থাকবে কেন? সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে “উদ্ভাস” সে মহান দায়িত্ব নিয়ে ব্রতী হয়েছে নিরলস সাহিত্যসেবায়।

সৃজনশীল শিল্পীরা সৃষ্টিসুখের আনন্দেই মেতে থাকেন।তাঁরা স্রষ্টা, তাঁদের শিল্পচর্চার পরিসর অসীম। অন্যরা তার যোগ্য সমাদর করছেন কিনা, যথার্থ রসস্বাদন হচ্ছে কিনা , তা নিয়ে সৃজনশীল ব্যক্তিদের কোন আক্ষেপ নেই।কেননা তাঁরা আত্মসুখী থাকেন তাঁদের রচনা, তাঁদের শিল্পকলা, তাঁদের সৃজনশীলতা নিয়ে।এ প্রসঙ্গে ১৪১৭ বঙ্গাব্দে শারদীয়া দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতার ক’টি লাইন উদ্ধৃত করার লোভ সম্বরন করা গেল না।
“…. কবিটি এমন কি কেউকেটা, ক’জন তাকে চেনে?
কবিদের এই এক মজা, দু’দশজন পাগলভক্ত তাদের ফুলদুব্বো দেয়
বাকি বিশাল জনতার কাছে তাদের অস্তিত্বই নেই। …”
সত্য বড় কঠোর,তাই মন্তব্য নিস্প্রয়োজন।

কালো মেঘের আবরণ ভেদ করে করে এক ছটা সূর্য্যর আলো যেমন অন্ধকারের কলিমাকে মুছে দিতে পারে, তেমনি আলোর মত শুভশক্তি আনে আমাদের মনে এক স্নিগ্ধ আনন্দধারা। সে যেন আমাদের ক্লান্ত অবসন্ন মনকে উচ্ছ্বাসে ছুঁয়ে যায়। যেমন করে সবুজ কিশলয়ের বুকে ভেজা শিশিরের প্রলেপ প্রকৃতিকে দেয় নতুন ভরসা তেমনি সেই প্রকৃতিকে সঙ্গী করেই আমরা একসাথে এগিয়ে চলি শুভশক্তির জয়যাত্রায়। শারদ ঋতুতে মা দূর্গাকে আবাহন করি পাশবিক শক্তির বিনাশে। আসুন, আমরাও দেবী অর্চনার মধ্যমে এই সংকল্পে ব্রতী হই,যে দেশকালের গন্ডী পেরিয়ে মানবিকতার স্বার্থে, সাহিত্য সংস্কৃতির প্রয়োজনে নিজেদর মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন গড়ে তুলবো। আর সে কাজে উদ্ভাসই হবে আমাদের অস্ত্র,আমাদের পাথেয়,আমাদের সম্পদ, আমাদের গৌরব।

মাঝের ক্ষণিক বিরতির পরে নবোদ্যমে ফিরে এসেছে উদ্ভাস, নতুন সাজে সেজে,নতুন রূপে উদ্ভসিত হয়ে পুরোনো ধ্যান ধারনকে নব উদ্যমে সাকার করতে। উদ্ভাসকে এগিয়ে নিয়ে চলুন, সঙ্গ দিন, পথ দেখান। উদ্ভাস পড়ুন, উদ্ভাস পড়ান। উদ্ভাসকে পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত হতে সাহায্য করুন। “Art is not the bread, but wine of life.” রোজকার জীবনর বারো মাসের ব্যস্ততা,উদ্বেগ, দুঃখ-কষ্টের মহাসিন্ধুর মাঝে আমাদের “উদ্ভাস” একবিন্দু সুধা। আশা করছি “উদ্ভাস” আপনাদের মনের খোরাক মিটাতে পারবে।

পরিশেষে আরেকবার “উদ্ভাস” আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছে আন্তরিক শারদ সম্ভাষণ। মাতৃ পূজার এই দিনগুলি আপনজনসহ আপনাদের শুভ হোক, মঙ্গলময়ীর কাছে এই প্রার্থনাই রইলো।

উদ্ভাসের পক্ষে
সম্পাদকমন্ডলী