উদ্ভাস

১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, অক্টোবর ২০১২

অনুপ দত্ত

বৈরাগী


একটা দমকা হাওয়া এসে ঘুড়ির মুখটা ঘুরিয়ে দিলো আর ঘুড়িটা কেটে গেল হঠাট ! পাশের মাঠে নন্দ তখন লাফাচ্ছে আজমিলের ঘুড়িটা ভোকাট্টা হয়েছে বলে! দুই বন্ধু..আজমিল আর হাসান ! দুজনেই হাসতে লাগলো !এই বয়েসে হাসার জন্য বিশেষ কোনো উপলক্ষ লাগে না ! ঘুড়িটা এর মধ্যে গিয়ে পড়েছে পাশের খালের জলে ! আজমিল আর হাসান, দুজনের বয়েস বারো-চোদ্দ হবে !প্রানের বন্ধু দুজনে ! যেখানে যায় দুজনের হাত দুজনে কাঁধে ! মুখে হাসি..কিন্তু কে বুঝবে পেটে ওদের আজ খাওয়া জোটেনি !
এই বয়েস টা একটু মুস্কিলের ! গ্রামে একটা ছাপড়া বাঁধা প্রায়মারি ইস্কুল আছে..সেটা তে পয়সার অভাবে ওরা পড়তে পারে নি ! দুই বন্ধুর খুব লোভ ছিল ইস্কুলটার উপর ....পড়াশোনার চাইতে টিফিনে খিচুরী খাওয়ার জন্য ! মাধ্যমিক ইস্কুলটা অনেক দুরে ত়া প্রায় তিন চার মাইল গ্রাম থেকে..দুরত্ব টা ব্যাপার নয়..সেখানে কোনো টিফিনের ব্যবস্থা নেই ! তাই প্রায়মারি ইস্কুল শেষ করে মাধ্যমিক ইস্কুলে যাবার তাগাদা ছিল না কোনো ! দুই বন্ধু একদিন আক্ষেপ করে বলেছিল..দূর শালা চার মাইল হেঁটে হিয়ে খালি পেটে কে ফিরবে !
বয়েসটা বেশি না হলেও এই বয়েছে গ্রামে রোজগারের ধান্দা শুরু হয়ে যায় আর কি ! কিন্তু সেটা এত সহজ নয় ! মাঠের কাজে বয়েস কম বলে নিতে চাইত না ওদেরকে সবাই ! পঞ্চায়েত থেকে নাকি কি এক একশ দিন যোজনার কাজ চালু করেছে..কিন্তু ওরা আঠেরো বছর বয়েস নয় বলে.. কাজ পায় না !
তা হলে ওরা কি করবে! পেটটা তো ভরাতে হবে ! সকাল বেলা থেকে দুই বন্ধু কাঁধে হাত রেখে সব বাড়ি বাড়ি যায়..জিগ্যেস করে..
-মাসীমা/কাকিমা ,,সংসারের কিছু কাজ আছে কি ?

-গাছে উঠে নারকোল পারব কি কিম্বা বলেন তো গরুর খর কাটা হাঁসুলি দিয়ে !

কিন্তু এ কাজ গুলো সপ্তাহে এক দুবারের বেশি তো হয় না....কি করে ,ক্ষিদে তো আর তত দিন বসে থাকে না ! ওদের পূর্ণ বয়স্ক হতে আরো চার পাঁচ বছর লাগবে ! সেই বছর গুলো কাটে কি ভাবে !
এই সময় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে হিলি আর ডাঙ্গী বর্ডার'এ গুরু পাচারের বেশ খোলাখুলি ব্যবস্থা ছিল..বেশ আরাম করে ..রয়ে সয়ে কাজ টাজ গুলো করা যেত ! কাজ গুলো বেশি হতো ঈদের আর মহরমের মাসগুলোতে ! ডিমান্ড আর সাপ্লাইয়ের ব্যাপার ! ওদিকটায় পেট্রল ডিসেল কেরোসিন সস্তা ..এই গুলোর সঙ্গে ওগুলো একচেঞ্জে এপার বাংলায় আসত ! বেশ একটা লোভনীয় ব্যাপার ছিল..বেশ সব চলছিল একটা রুটিন বেঁধে ! দু পয়সা কামাই বেশ হচ্ছিল যুগল বন্দীর বন্ধুর ! হাতে পয়সা আসতে আজমিল আবার রুবিনা বিবির সঙ্গে একটু এদিক ওদিক শুরু করেছিল.!
রুবিনার মরদ দুবাই গিয়ে আর ফেরার নাম করে নি! উদ্ভিন্ন যৌবনের জ্বালা আর ছেলে দুটো না খেতে পাওয়া বলদের মতো সারা দিন ঘুরে বেড়াতো ..আজমিলকে রুবিনার পছন্দ হয়েছিল ! রোজ সন্ধে বেলা ডাকত আজমিলকে আর বোলতো শরীরে বড় ব্যথারে একটু দাবিয়ে দিয়ে যাস.... আর শোন রাতের খাবারটা এখানেই খেয়ে যাস ! আজমিলের প্রথম প্রথম ভালো লেগেছিল..তার'ও তো উঠতি যৌবন..কত না স্বপ্ন নারী সহবাসে ! তারপর সব ছায়াছবির হিরিক চারিদিকে!সংযত থাকাটাই মুস্কিলের ব্যাপার আরকি ! কিন্তু পড়ে খারাপ লাগতে শুরু করেছিল হাসান বন্ধুর জন্য ..কিন্তু কি করে, একি আর রান্নাবান্না করা খাবার একসাথে ভাগ করে নেবে ! সেই সব মহাভারতে হয় ..গ্রামে গঞ্জে কি আর মহাভারত রুপান্তরিত হয় ..যে যখন যাবে পায়ের চটি রেখে যাবে ঘরের দরজায় ..রুবিনা তো আর দ্রৌপদী নয়.!

মোবাইল ফোনের বেশ চাহিদা আছে এপার বাংলায়..তাই গরুর পরিবর্তে মোবাইল আসে এপারে ... .আহা কি একচেঞ্জ ! গুরু বেচে মোবাইল ! সে যাই হোক ,পয়সা তো হাতে আসা দিয়ে কথা..গরু মরলো কি পেট্রল পুরে গেল! কার কি তাতে যায় আসে !
তা কারবার টারবার বেশে জমে উঠেছিল...আজমিল আর হাসান সারাদিন ধরে রাস্তায় চরে বেড়াতো ! গরুর গলায় তাদের কোম্পানির বেল্ট লাগিয়ে.. একটা নম্বর বসিয়ে দিত..কখনো কখনো আগুনে গরম করা লাল রঙের লোহার কুর্পি দিয়ে গরুগুলোর পিঠে ক্রস চিন্হ একে দিত ! একটা বিভত্স ব্যপার এবং কখনো কখনো ছোট বাছুর গুলোর জন্য বেশ কষ্টকর হতো .. কে দেখে সেসময়..পাচার করে দিলেই তো হাতে পয়সা !

মাস খানেক হলো এক নোতুন উত্পাত জুড়েছে এই এলাকায় ! বি এস এফ'র এক নোতুন কাপ্টেন চাকরি নিয়ে এসেছে ! নোতুন চাকরি ..উঠতি বয়েস'এর এক জেদ সব মিলিয়ে এক থরহরি কম্প লাগিয়ে দিয়েছে বর্ডার এলাকা গুলোতে ! সে স্মাগলিং বন্ধ করবেই ! হুকুম দিয়ে দিয়েছে....স্মাগলার দেখলেই গুলি করে মেরে ফেলা হবে !
মাঝে মাঝে এরকম দু একটা মানুষ নজরে পড়ে..যারা আদর্শের কথা বলে শুরুতে! দু এক মাসের মধ্যেই আবার যে কে সেই হয়ে যায়...এই নোতুন অফিসারের ক্ষেত্রে সেই একই অবস্থা হবে স্মাগলাররা ঠিক এমনি মনে মনে আশা রাখত.. যে লেন দেন রফা হয়ে গেলে অফিসার আবার সব কিছু দেখবে না ! প্রত্যেক গরু বাছুরের উপরে রাজনৈতিক নেতাদের একটা বখরা আছে বা থাকে যা এই সব অফিসার জমা করে আসে তাদের নানা পার্টি অফিসে ! যাক গুলি গোলা চলেনি...তবে চললে হয়ত সরকারের উপর মহল খুশি হতো !
আজমিল আর হাসান..দুজনেই মেঘদূত ক্লাবের মাঠে মজদুরি করে এখন ! ক্লাবের পাশে এক পাঁচ তলা বাড়ি উঠছে..তাতে যোগানদারের কাজ...! হাসানে এসব ভালো লাগে না ! বলে...
-শালা ..গরু ধরা আর তার গায়ে ছাপ মারা অতি সহজ কাজ ! একটা বেশ হিন্দী সিনেমার মতো থ্রিল আছে ! এ শালা কাজের সেই এক ঘেঁয়ে চেলামি ....
- আরে হাসান ..এই তো আর কয়েকটা দিন..ওই হারামজাদা অফিসার লাইনে এলো বলে. খবর নিয়েছে পার্টি অফিসে..দাবাং অফিসারটাকে ডেকে পাঠিয়েছে এখানকার এম এল এ ! এইবার সোজা হবে ব্যাটা ! চিন্তা করিস না মন দিয়ে কাজ করে যা !
আজমিলের কোথায় হাসান রাগ করে না ! আজমিল কে সে মানে ! বয়েস এক হলে কি হবে আজমিলের কি একটা বোঝার শক্তি আছে সেটা অনেক বড় হাসানের থেকে !

আজমিলের বাবা পায়ে গুলি খেয়ে প্রায় পঙ্গু ! সে ওই বি এস এফ'র গুলি খেয়ে হয়েছে! ব্যথায় যত তা না কষ্ট..রাগে মাথা একেবারে আগুন হয়ে থাকে সব সময় ! রেগে সব সময় একি কথা ...

-শালা বুজরুক অফিসারটা বুঝছে না মাল পাচার বন্ধ হলে গরিব লোক খাবে কি! তাদের তো পুঁজি নাই..ব্যবসা করবে..! পরের ধনে পোদ্দারি করে যদি দু পয়সা ইনকাম হয় ..শালা তোর কোন বাড়া ভাতে আমার পা দিলাম রে ..শূইয়ারের .....! কথা টা শেষ করতে দেয় না তার বিবি জুবেদা খাতুন..
- থামো দিকিনি ...কি হবে গালি দিয়ে আর নিজের শরীর খারাপ করে ! আল্লাহ নিজে দেখবেন ..ইনসাল্লাহ!

বিকালে সবাই বাড়ি ফিরে এলে আজমিলের মা জুবেদা রাত্তির বেলা জন্য তিন ছেলে মেয়েকে শুধু জলে ভেজানো মুড়ি আর কচুর গথি সেদ্ধ করে খাওয়ায় !সঙ্গে হাসান'টাও থাকে .কালে অকালে হাসান'ও যুবেদার ছেলে হয়ে গাছে ! আজমিল দেখে আম্মি নীরবে চোখের জল ফেলছেন ! কি করবে বুঝে উঠে পারে না আজমিল ! চুপ করে থাকে আর উঠে গিয়ে আম্মির পাশে বসে থাকে ! আম্মি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় !

এদিকে আরেক বিপদ এসে নাড়া দিয়েছে ! প্রতি বছর এ সময় টা বাংলাদেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্টান ডাক্তারি পড়ার জিনিস পত্র,মানুষের হাড়গোর আর মেডিকাল যন্ত্রপাতি অর্ডার দেয় ! কিন্তু বর্ডারে নোতুন অফিসার যে হাঙ্গামা লাগিয়েছে ! হাসান এসে কাল খবর দিলো দুবার নাকি গুলি চলেছে ! বর্ডারের কাছে কোনো এক বাড়িতে সব কিছু জমা পড়ে আছে. পাচার আর হচ্ছে না !
এদিকে দিন দিন অবস্থা খারাপ দেখে মাল পাচারের শেঠ, ভাবিন ঝুনঝুনওয়ালা একদিন সন্ধেবেলা আজমিল দের বাড়িতে এসে হাজির ! হাসান'ও ছিল তখন ! আজমিলের আব্বা সাইফুদ্দিন দাওয়ায় বসে আরাম করছিল....ভাঙ্গা পা তাকে একটু সরিয়ে শেঠকে বসার জায়গা করে দিলো !
ঝুনঝুনওয়ালা ব্যবসাদার লোক..সব সময় পান খায় ! সময় নষ্ট না করে সরাসরি বল্লে..
- সাইফুদ্দিন মিঁয়া তোমার এই ছেলে দুটোকে আমার চাই ! বেশ কিছু মাল পাচারের জন্য পড়ে আছে !ডাক্তারি যন্ত্র আর কিছু হাড় গোর ! হাঁ আর একটা বড় বাক্স পুরো মানব কঙ্কালের ! সেটা কার ছিল জানো..ঐযে পাশের গ্রামে বৈষ্ণব রতন বৈরাগী ..সে মারা যায় গত মাসে ! বৈরাগীরা তো মারা গেলে দেহ জ্বালায় না ..মাটিতে পুতে দেয় ! তাকে তুলে এনে জল আসিড দিয়ে ধুয়ে আস্ত কঙ্কাল বানানো হয়েছে ! ওটা যাবে হিলি হয়ে সান্তাহার .সেখান থেকে সোজা ঢাকা রাজধানীতে ! বেশ বড় কাজ গো এটা ! দুঃখের ব্যাপার রতনটা আমায় রোজ বলত ..এবার এসব ছেড়ে চলে যাব দেশের বাড়িতে বর্ডার পেরিয়ে হিলিতে !
কথার মাঝে জুবেদা বিবি ঘোমটা মাথায় রান্নাঘর থেকে ঝামটা দিয়ে বলে..
- না..না.. ওরা যাবে না ! একেবারে ছোট পোলাপান ! আর তা ছাড়া আবহওয়া বেশ গরম এখন !
ঝুনঝুনওয়ালা ব্যবসায়ী লোক !মাথা নীচু করে বলে ..
-বিবিজান, জানি আপনি মা আর তার জন্য চিন্তা বেশি ! ওদের খাবার দাবার জোগাড় করতে আপনাকে বড় বেকায়দায় পড়তে হয় মাঝে মধ্যে ! তাবড় পরিশ্রম করতে হয়..সাইফুদ্দিনের পায়ের যা অবস্থা.. আমার তো মনে হয় আরো মাস ছয়েক লাগবে কাম কাজ ঠিক থাক করতে ! হাতে পয়সা না থাকলে আপনি সেদ্ধ ভাত ছাড়া আর কি দিতে পারবেন..না ! না ..মনে কিছু নিবেন না ! সত্যিটা মাথায় এলেও আরকি বিবিজান ! বলে গেলাম !
ঝুনঝুনওয়ালা আর কথা না বাড়িয়ে একটা কাপড়ের থলে সাইফুদ্দিনের দাওয়ায় রেখে উঠে পড়ল !
- হাঁ আর একটা কথা যেতে যেতে বলে যাই ..ওই শালা পুলিশের বাচ্চারা শিশু বা নাবালকদের উপরে গুলি ছুড়তে পারবে না...আইনে বাধা আছে !আমার কথাটা বিশ্বাস না হয় তো থানা গিয়ে একটু জিগ্যেস করে নিবেন ! আচ্ছা চলি বিবিজান !

থলেটা হাতে তুলে নেয় সাইফুদ্দিন..খুলে দ্যাখে বেশ অনেকগুলো টাকা থরে থরে সাজানো ! ফট করে গুনে ফেলে ..এক হাজার টাকা ! স্বপ্নের মতো যেন ..এক সঙ্গে দ্যাখেনি সে কোনদিন ! টাকার থলেটা জুবেদার হাতে তুলে দেয় সাইফুদ্দিন আর পাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়ে !
হাসান এতক্ষণ এক কোনে দাঁড়িয়ে বেশ মজা দেখছিল... আজমিলের কাঁধে হাত রেখে !
- কি গুরু..কি ভাবছ তুমি ! রাজী ?
- হাতে নগদ টাকা পেলে আবার কিসের চিন্তা আর ভয় রে হাসান !আমাদের তো এই কাজ করতে হবে আজ নয়তো কাল ! চল আম্মিকে বলি আজ বেশ বড় করে গোস্ত রান্না করতে ! পেট ভরে খেতে হবে! জানিস তো ভরা পেট থাকলে ভয় কম লাগে ! ভয় ডর সব পালিয়ে যায় !
ওরা প্রথম কিস্তির মালটা নিয়ে রাতে বেড়িয়ে পড়ে ! বর্ডারের প্রায় কাছে যে বাড়িটা তে মাল গুলো থাকে সেখানেই চুপ চাপ ঘাপটি মেরে বসে থাকে! সুযোগ বুঝে বস্তা গুলোকে পাচার করে দেয় ওপারের লোকটার হাতে ! ওরা একট কোড বলে ! মাল পাচার হয়ে যায় !
দিন দশেক চলে এই ভাবে ! তবে রোজ নয় !
বি এস এফ'এর জওয়ানরা জোর কদমে পাহারা দেয় মাঝ রাত অবধি..ভোরের রাতে একটু ঢিলে হয় পায়চারী ! আজমিল সেটা নজর করেছে আগে ! হাসান কে বলে ..
-দোস্ত আজ বড় বাক্স টা পাচার করতে হবে !
- কই বাত নেহি দোস্ত ..তুমি যেমন বলবে গুরু ..আমি হাজির !
একটাই বাক্স ..একটু বেশি ভারী ! আগের বস্তা গুলো একটু সহজ ছিল..যা হোক...আজকেরটা হলে বেশ কয়েকদিন যুত করা যাবে ! আম্মির হাতে যা টাকা তুলে দেয়া গ্যাছে তা দিয়ে আম্মি আরো প্রায় দুই তিন মাস আরামে চালিয়ে নেবে !
-চল হাসান ..হাত লাগা ! মাঝরাতের আগেই পৌছাতে হবে সেই বাড়িটার পেছনে ! সুযোগ দেখে ঐপারে বাস খালাস !
- আজমিল আজ তো টাকার অঙ্ক তাও বড় সাত হাজার নিয়ে ঝুনঝুনওয়ালাকে দিতে হবে !
- হাঁ . তুই আর কথা বাড়াস না চল.. এগিয়ে চল !
ওপারের লোকটা কোড বল্লো ! মাল ডেলিভারি হয়ে গেল! হাসান বলে ..দাদা টাকাটা দিন এবার !
কোড বলা লোকটা বলে ..
- হালার পো..ট্যাহা এহন হবে টবে না ! যা এহন পালা গিয়া পড়ে দেখন যাবে ক্ষণ !
আজমিল ভয়ে কেঁপে উঠলো.ঝুনঝুনওয়ালা বার বার বলে দিয়েছে টাকা না নিয়ে আসলে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবে !
- দেখ দাদা ..ট্যাহা না নিয়ে গেলে তো মারা পড়ব !
সেই মাত্তবর লোকটা আজমিলের পেটে একটা লাথি কষিয়ে দেয় ! বন্ধুর এ অবস্থা দেখে হাসান চেচিয়ে ওঠে !
- হালার পো তুই হালা ! পয়সা না দিয়ে গেলে ভালো হবে না কিন্তু !
মাত্তবর টা এবার চেঁচিয়ে ওঠে !
- এখনো মুখের দুধের গন্ধ যায় নাই হালার পো এরই মধ্যে এই লাইনে নাইমা পড়ছস ! মাত্তবরের হাতে সময় ও কম ! সান্তাহার অনেক দুরের পথ সূর্য্য উঠার আগেই পৌছাতে হবে !
এর মধ্যে দুরে অনেক আলো দেখ যেতে লাগলো ! মনে হলো টর্চের আলো ! মাত্তবর লোকটা আজমিলের হাতে হাজার দুয়েক টাকা গুজে দিয়ে বল্লো শেঠকে বলবি আমি পড়ে এসে রফা করব !এই বলে পিছনে রাখা জীপটাতে উঠে জোরে চালিয়ে দিলো !
তখন ভোর হয়ে এসেছে প্রায় ! ভোরের দিকে গাড়ি চালকের ছোখে ঘুম ঘুম আসাতে সে দুরন্ত গতিতে সামনে থেমে থাকা একটা লরির পেছনে জোরে ধাক্কা মারলো !

আজমিল আর হাসান ফিরে যেতে যেতে গাড়ি ধাক্কা খাওয়ার প্রচন্ড শব্দে চমকে উঠলো !
মাত্তবর লোকটা কোথায় ছিটকে পড়ে রইলো কে জানে ! জীপটা উল্টে গিয়ে পড়লে পাশের জমিটার ভেতরে ! জমিটা চাষের জন্য লাঙ্গল দিয়ে মাটি নরম করে রেখেছিল চাষীরা ! জীপটা বার দুয়েক পালটি খেয়ে মুখ থুবরে পড়ে রইলো! জীপের পেছনে যে কঙ্কালের বাক্স টা ছিল সেটা জীপের পেছনে গর্ত হওয়া জমির ভেতরে আস্তে আস্তে ঢুকে গেল !
আজমিল আর হাসান অনেক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখল এসব ! তারপর প্রায় ছুটতে ছুটতে বাড়ি এসে পড়ল তখন প্রায় সকাল হয়ে এসেছে !
এসে দেখে ... ঝুনঝুনওয়ালা বাড়িতেই বসে আছে আজ ! যা টাকা পেয়েছিল ঝুনঝুনওয়ালা হাতে তুলে দিয়ে আজমিল সমস্ত বিবরণ দিলো ! ঝুনঝুনওয়ালা চুপ করে শুনলো সো কথা ! যাবার আগে সাইফুদ্দিন আর জুবেদা বিবি কে বলে গেল
- বিবিজান .. একেই বলে খোদার কাছে শেষ ইচ্ছা ! সব সময় শুনেন ঈশ্বর ! তোমাদের তো আগেই বলেছি ওই কঙ্কালটা রতন বৈরাগীর ছিল ! ওর শেষ ইচ্ছা ছিল ওর নিজের দেশ গিয়ে ওকে যেন কবর দেয়া হয়! সায়ফুইদ্দিন দ্যাখো, ইশ্বরের কি লীলা ..নিজের জমিতে কবর হোল..... কিন্তু মানুষ কবর না হয়ে কঙ্কাল কবর হয়ে রইলো !
যে হাজার দুয়েক টাকাটা আজমিল তুলে দিয়েছিল ঝুনঝুনওয়ালার হাতে ...সেটা সৈফুদ্দিনের দাওয়ায় রেখে দিলো আর তার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ছাতা বগল দাবা করে সে বেড়িয়ে গেল !

তার একটু পরে খুব জোরে বৃষ্টি নামলো...কিন্তু কি শান্ত কি সুন্দর ধারায় ! আহা ..মনে হলে সমস্ত পাপ ধুয়ে রতন বৈরাগীর কবর পবিত্র করে দিলো আকাশ !