উদ্ভাস

১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, অক্টোবর ২০১২

মৌ দাশগুপ্তা

ময়না কথা কয় না


হতকুচ্ছিত দেখতে বলে বিয়ে হয়নি মদন মুদির বড় মেয়ে ময়নার।বাপ মা অনেক চেষ্টা চরিত্তির করেও ময়নার বর জোটাতে পারে নি।বয়স তো আর বসে থাকে না।ওর পিঠোপিঠি দুই বোন আয়না আর গয়না বিয়ে থা করে রীতিমত ছেলেপুলের মা হয়ে ঘোর সংসারী।একা ময়নাই বাপ মার গলার কাঁটা, চোখের বালি হয়ে এর কথা তাকে আর তার কথা একে লাগিয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের এ-দোর ও-দোর ঘুরে বেড়াচ্ছে।কত মানত,তাবিজ,মাদুলী,কিন্তু ময়নার বিয়ের ফুল আর ফোটে নি।

সিঁদুরে বড় লোভ মেয়েটার,আহা, সধবা মানুষ কেমন ডগমগ করে সিঁথি ভরে সিঁদুর পড়ে।ঠাকুর পূজোর সিঁদুর নিয়ে তিলক কাটার ছলে নিজের সিঁথি ঘেঁষে ফোঁটা কাটে ময়না।রঙ জ্বলা আয়নাটার সামনে বিহ্বল হয়ে দাঁড়ায় , মাথায় ঘোমটা তুলে দিয়ে ঘুরে ফিরে দেখে সিঁদুর পরে কেমন মানাচ্ছে।সিঁথিতে একটু সিঁদুরের ছোঁয়ায় নিজেই নিজেকে চিনতে পারেনা মেয়েটা।বোনেরা মুখ টিপে হাসে।মা চোখের জল চেপে দাঁত কিড়মিড় করে। বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে যায়।পাড়াপড়শীতে ক্ষ্যাপায়।

ময়না বোঝে না পুরুষমানুষ এত বোকা হয় কেন? না হয় ময়নার মুখটা হতকুচ্ছিত।কিন্তু ওর মনটা? সেটা তো কেউ দেখে না! কজন পারে ওর মত গায়ে তরে খাটতে? নকশী কাঁথায় নিপুণ ফোঁড়ে সেলাই করতে?

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রেললাইন ধরে পায়ে হেঁটে বাজার থেকে ঘরে ফিরছিল ময়না।পিছন থেকে ছুটে আসা ট্রেনটা দেখতে পায়নি , নাকি দেখেও সরতে পারেনি, সেটা ও কাউকে জানিয়ে যায়নি।বোনেরা কাঁদতে কাঁদতে দিদিকে নতুন কাপড় দিয়ে ঢেকে সাজিয়ে দিচ্ছিল, দেহটা একটু বিকৃত হয়নি , শুধু ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে মাথার পেছনে জোর চোট লেগেছিল।রক্তে মাখামাখি সিঁথি, চুল,কপালে চন্দনের টিপ, নতুন শাড়ী, ফুলের মালা, ময়নার বড় কাঙ্খিত সম্পদে সেজে উঠছিল ওর প্রাণহীন দেহটা।বাপের বাড়ী ছেড়ে নতুন বাড়ীতে যাচ্ছে বলেই বোধহয় হতকুচ্ছিত দেখতে মেয়েটার মুখটা কেমন হাসিমুখ বলে মনে হচ্ছিল সবার।