উদ্ভাস

১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, অক্টোবর ২০১২

উদ্ভাস - ১ম বর্ষ ২য় সংখ্যা, অক্টোবর ২০১২

সম্পাদকীয় : উদ্ভাস


দেখতে দেখতে শরৎকাল হাজির, বাতাসে আগমনীর সুর ছড়িয়ে ।“শরত তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি….” –শরতের আলো প্রতিভাত হোক আপনার আমার সকলের জীবনে। দ্বিতীয় সংখ্যার উদ্ভাস প্রকাশের শুভলগ্নে আপনাদের সবাইকে জানাই শারদীয়ার আগাম প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।যাযাবরের অনুকরনে আমরাও বলতে পারি,বেগের সাথে সমানুপতক হারে উদ্বেগও বেড়েছে।যণ্ত্র সভ্যতা আমাদের যতটা না ব্যস্ত রেখেছে, ব্যাতিব্যস্ত করে রেখেছে অনেক বেশী। আজ সবার মুখে একই কথা, “হাতে যে একদম সময় নেই।“ লোক-লৌকিকতার সময় নেই, পরিজনের সাথে দুদন্ড কথা বলার সময় নেই, শখ পূরণের সময় নেই, শল্প চর্চা, কাব্য চর্চা, সাহিত্য চর্চা, যে সেখনে অবহেলিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবুও কেউ কেউ তারই মাঝে মনের ভাব কলমের আঁচড়ে, অক্ষরের সুষম বি ন্যসে সাদা কাগজের বুকে এঁকে যান, এভাবেই সৃষ্টি হয় কখনো কবিতা, কখনো গল্প, বা আত্মকাহিনী, নিবন্ধ,l প্রবন্ধ, উপন্যাস, ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের রচনা। অনেকে লিখতে না পারলেও মনের খিদে মেটান চোখের বাতায়নপথে এই সব মনিমুক্তার রসস্বাদনে।তাই বর্তমানকালের কবি লেখক সাহিত্যিকরা কি ভাবছেন, কি লিখছেন সে কথা ছাপার অক্ষরে আস্বাদনের জন্য উন্মুখ থাকেন সাহিত্যপ্রেমী আগ্রহী পাঠকেরা।এদের খবর যদি কেউ জানাতেই না পারে তাহলে সাহিত্যপ্রেমীদের সাহিত্যসেবার সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ।সাহিত্য পত্রিকার পাশাপাশি বাংলা ই-ম্যাগজিন, ব্লগাজিনগুলোই বা তাহলে তাঁদের চাহিদা মিটানোর ক্ষেত্রে পিছনে পড়ে থাকবে কেন? সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে “উদ্ভাস” সে মহান দায়িত্ব নিয়ে ব্রতী হয়েছে নিরলস সাহিত্যসেবায়।

সৃজনশীল শিল্পীরা সৃষ্টিসুখের আনন্দেই মেতে থাকেন।তাঁরা স্রষ্টা, তাঁদের শিল্পচর্চার পরিসর অসীম। অন্যরা তার যোগ্য সমাদর করছেন কিনা, যথার্থ রসস্বাদন হচ্ছে কিনা , তা নিয়ে সৃজনশীল ব্যক্তিদের কোন আক্ষেপ নেই।কেননা তাঁরা আত্মসুখী থাকেন তাঁদের রচনা, তাঁদের শিল্পকলা, তাঁদের সৃজনশীলতা নিয়ে।এ প্রসঙ্গে ১৪১৭ বঙ্গাব্দে শারদীয়া দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতার ক’টি লাইন উদ্ধৃত করার লোভ সম্বরন করা গেল না।
“…. কবিটি এমন কি কেউকেটা, ক’জন তাকে চেনে?
কবিদের এই এক মজা, দু’দশজন পাগলভক্ত তাদের ফুলদুব্বো দেয়
বাকি বিশাল জনতার কাছে তাদের অস্তিত্বই নেই। …”
সত্য বড় কঠোর,তাই মন্তব্য নিস্প্রয়োজন।

কালো মেঘের আবরণ ভেদ করে করে এক ছটা সূর্য্যর আলো যেমন অন্ধকারের কলিমাকে মুছে দিতে পারে, তেমনি আলোর মত শুভশক্তি আনে আমাদের মনে এক স্নিগ্ধ আনন্দধারা। সে যেন আমাদের ক্লান্ত অবসন্ন মনকে উচ্ছ্বাসে ছুঁয়ে যায়। যেমন করে সবুজ কিশলয়ের বুকে ভেজা শিশিরের প্রলেপ প্রকৃতিকে দেয় নতুন ভরসা তেমনি সেই প্রকৃতিকে সঙ্গী করেই আমরা একসাথে এগিয়ে চলি শুভশক্তির জয়যাত্রায়। শারদ ঋতুতে মা দূর্গাকে আবাহন করি পাশবিক শক্তির বিনাশে। আসুন, আমরাও দেবী অর্চনার মধ্যমে এই সংকল্পে ব্রতী হই,যে দেশকালের গন্ডী পেরিয়ে মানবিকতার স্বার্থে, সাহিত্য সংস্কৃতির প্রয়োজনে নিজেদর মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন গড়ে তুলবো। আর সে কাজে উদ্ভাসই হবে আমাদের অস্ত্র,আমাদের পাথেয়,আমাদের সম্পদ, আমাদের গৌরব।

মাঝের ক্ষণিক বিরতির পরে নবোদ্যমে ফিরে এসেছে উদ্ভাস, নতুন সাজে সেজে,নতুন রূপে উদ্ভসিত হয়ে পুরোনো ধ্যান ধারনকে নব উদ্যমে সাকার করতে। উদ্ভাসকে এগিয়ে নিয়ে চলুন, সঙ্গ দিন, পথ দেখান। উদ্ভাস পড়ুন, উদ্ভাস পড়ান। উদ্ভাসকে পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত হতে সাহায্য করুন। “Art is not the bread, but wine of life.” রোজকার জীবনর বারো মাসের ব্যস্ততা,উদ্বেগ, দুঃখ-কষ্টের মহাসিন্ধুর মাঝে আমাদের “উদ্ভাস” একবিন্দু সুধা। আশা করছি “উদ্ভাস” আপনাদের মনের খোরাক মিটাতে পারবে।

পরিশেষে আরেকবার “উদ্ভাস” আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছে আন্তরিক শারদ সম্ভাষণ। মাতৃ পূজার এই দিনগুলি আপনজনসহ আপনাদের শুভ হোক, মঙ্গলময়ীর কাছে এই প্রার্থনাই রইলো।

উদ্ভাসের পক্ষে
সম্পাদকমন্ডলী

অনুপ দত্ত

বৈরাগী


একটা দমকা হাওয়া এসে ঘুড়ির মুখটা ঘুরিয়ে দিলো আর ঘুড়িটা কেটে গেল হঠাট ! পাশের মাঠে নন্দ তখন লাফাচ্ছে আজমিলের ঘুড়িটা ভোকাট্টা হয়েছে বলে! দুই বন্ধু..আজমিল আর হাসান ! দুজনেই হাসতে লাগলো !এই বয়েসে হাসার জন্য বিশেষ কোনো উপলক্ষ লাগে না ! ঘুড়িটা এর মধ্যে গিয়ে পড়েছে পাশের খালের জলে ! আজমিল আর হাসান, দুজনের বয়েস বারো-চোদ্দ হবে !প্রানের বন্ধু দুজনে ! যেখানে যায় দুজনের হাত দুজনে কাঁধে ! মুখে হাসি..কিন্তু কে বুঝবে পেটে ওদের আজ খাওয়া জোটেনি !
এই বয়েস টা একটু মুস্কিলের ! গ্রামে একটা ছাপড়া বাঁধা প্রায়মারি ইস্কুল আছে..সেটা তে পয়সার অভাবে ওরা পড়তে পারে নি ! দুই বন্ধুর খুব লোভ ছিল ইস্কুলটার উপর ....পড়াশোনার চাইতে টিফিনে খিচুরী খাওয়ার জন্য ! মাধ্যমিক ইস্কুলটা অনেক দুরে ত়া প্রায় তিন চার মাইল গ্রাম থেকে..দুরত্ব টা ব্যাপার নয়..সেখানে কোনো টিফিনের ব্যবস্থা নেই ! তাই প্রায়মারি ইস্কুল শেষ করে মাধ্যমিক ইস্কুলে যাবার তাগাদা ছিল না কোনো ! দুই বন্ধু একদিন আক্ষেপ করে বলেছিল..দূর শালা চার মাইল হেঁটে হিয়ে খালি পেটে কে ফিরবে !
বয়েসটা বেশি না হলেও এই বয়েছে গ্রামে রোজগারের ধান্দা শুরু হয়ে যায় আর কি ! কিন্তু সেটা এত সহজ নয় ! মাঠের কাজে বয়েস কম বলে নিতে চাইত না ওদেরকে সবাই ! পঞ্চায়েত থেকে নাকি কি এক একশ দিন যোজনার কাজ চালু করেছে..কিন্তু ওরা আঠেরো বছর বয়েস নয় বলে.. কাজ পায় না !
তা হলে ওরা কি করবে! পেটটা তো ভরাতে হবে ! সকাল বেলা থেকে দুই বন্ধু কাঁধে হাত রেখে সব বাড়ি বাড়ি যায়..জিগ্যেস করে..
-মাসীমা/কাকিমা ,,সংসারের কিছু কাজ আছে কি ?

-গাছে উঠে নারকোল পারব কি কিম্বা বলেন তো গরুর খর কাটা হাঁসুলি দিয়ে !

কিন্তু এ কাজ গুলো সপ্তাহে এক দুবারের বেশি তো হয় না....কি করে ,ক্ষিদে তো আর তত দিন বসে থাকে না ! ওদের পূর্ণ বয়স্ক হতে আরো চার পাঁচ বছর লাগবে ! সেই বছর গুলো কাটে কি ভাবে !
এই সময় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে হিলি আর ডাঙ্গী বর্ডার'এ গুরু পাচারের বেশ খোলাখুলি ব্যবস্থা ছিল..বেশ আরাম করে ..রয়ে সয়ে কাজ টাজ গুলো করা যেত ! কাজ গুলো বেশি হতো ঈদের আর মহরমের মাসগুলোতে ! ডিমান্ড আর সাপ্লাইয়ের ব্যাপার ! ওদিকটায় পেট্রল ডিসেল কেরোসিন সস্তা ..এই গুলোর সঙ্গে ওগুলো একচেঞ্জে এপার বাংলায় আসত ! বেশ একটা লোভনীয় ব্যাপার ছিল..বেশ সব চলছিল একটা রুটিন বেঁধে ! দু পয়সা কামাই বেশ হচ্ছিল যুগল বন্দীর বন্ধুর ! হাতে পয়সা আসতে আজমিল আবার রুবিনা বিবির সঙ্গে একটু এদিক ওদিক শুরু করেছিল.!
রুবিনার মরদ দুবাই গিয়ে আর ফেরার নাম করে নি! উদ্ভিন্ন যৌবনের জ্বালা আর ছেলে দুটো না খেতে পাওয়া বলদের মতো সারা দিন ঘুরে বেড়াতো ..আজমিলকে রুবিনার পছন্দ হয়েছিল ! রোজ সন্ধে বেলা ডাকত আজমিলকে আর বোলতো শরীরে বড় ব্যথারে একটু দাবিয়ে দিয়ে যাস.... আর শোন রাতের খাবারটা এখানেই খেয়ে যাস ! আজমিলের প্রথম প্রথম ভালো লেগেছিল..তার'ও তো উঠতি যৌবন..কত না স্বপ্ন নারী সহবাসে ! তারপর সব ছায়াছবির হিরিক চারিদিকে!সংযত থাকাটাই মুস্কিলের ব্যাপার আরকি ! কিন্তু পড়ে খারাপ লাগতে শুরু করেছিল হাসান বন্ধুর জন্য ..কিন্তু কি করে, একি আর রান্নাবান্না করা খাবার একসাথে ভাগ করে নেবে ! সেই সব মহাভারতে হয় ..গ্রামে গঞ্জে কি আর মহাভারত রুপান্তরিত হয় ..যে যখন যাবে পায়ের চটি রেখে যাবে ঘরের দরজায় ..রুবিনা তো আর দ্রৌপদী নয়.!

মোবাইল ফোনের বেশ চাহিদা আছে এপার বাংলায়..তাই গরুর পরিবর্তে মোবাইল আসে এপারে ... .আহা কি একচেঞ্জ ! গুরু বেচে মোবাইল ! সে যাই হোক ,পয়সা তো হাতে আসা দিয়ে কথা..গরু মরলো কি পেট্রল পুরে গেল! কার কি তাতে যায় আসে !
তা কারবার টারবার বেশে জমে উঠেছিল...আজমিল আর হাসান সারাদিন ধরে রাস্তায় চরে বেড়াতো ! গরুর গলায় তাদের কোম্পানির বেল্ট লাগিয়ে.. একটা নম্বর বসিয়ে দিত..কখনো কখনো আগুনে গরম করা লাল রঙের লোহার কুর্পি দিয়ে গরুগুলোর পিঠে ক্রস চিন্হ একে দিত ! একটা বিভত্স ব্যপার এবং কখনো কখনো ছোট বাছুর গুলোর জন্য বেশ কষ্টকর হতো .. কে দেখে সেসময়..পাচার করে দিলেই তো হাতে পয়সা !

মাস খানেক হলো এক নোতুন উত্পাত জুড়েছে এই এলাকায় ! বি এস এফ'র এক নোতুন কাপ্টেন চাকরি নিয়ে এসেছে ! নোতুন চাকরি ..উঠতি বয়েস'এর এক জেদ সব মিলিয়ে এক থরহরি কম্প লাগিয়ে দিয়েছে বর্ডার এলাকা গুলোতে ! সে স্মাগলিং বন্ধ করবেই ! হুকুম দিয়ে দিয়েছে....স্মাগলার দেখলেই গুলি করে মেরে ফেলা হবে !
মাঝে মাঝে এরকম দু একটা মানুষ নজরে পড়ে..যারা আদর্শের কথা বলে শুরুতে! দু এক মাসের মধ্যেই আবার যে কে সেই হয়ে যায়...এই নোতুন অফিসারের ক্ষেত্রে সেই একই অবস্থা হবে স্মাগলাররা ঠিক এমনি মনে মনে আশা রাখত.. যে লেন দেন রফা হয়ে গেলে অফিসার আবার সব কিছু দেখবে না ! প্রত্যেক গরু বাছুরের উপরে রাজনৈতিক নেতাদের একটা বখরা আছে বা থাকে যা এই সব অফিসার জমা করে আসে তাদের নানা পার্টি অফিসে ! যাক গুলি গোলা চলেনি...তবে চললে হয়ত সরকারের উপর মহল খুশি হতো !
আজমিল আর হাসান..দুজনেই মেঘদূত ক্লাবের মাঠে মজদুরি করে এখন ! ক্লাবের পাশে এক পাঁচ তলা বাড়ি উঠছে..তাতে যোগানদারের কাজ...! হাসানে এসব ভালো লাগে না ! বলে...
-শালা ..গরু ধরা আর তার গায়ে ছাপ মারা অতি সহজ কাজ ! একটা বেশ হিন্দী সিনেমার মতো থ্রিল আছে ! এ শালা কাজের সেই এক ঘেঁয়ে চেলামি ....
- আরে হাসান ..এই তো আর কয়েকটা দিন..ওই হারামজাদা অফিসার লাইনে এলো বলে. খবর নিয়েছে পার্টি অফিসে..দাবাং অফিসারটাকে ডেকে পাঠিয়েছে এখানকার এম এল এ ! এইবার সোজা হবে ব্যাটা ! চিন্তা করিস না মন দিয়ে কাজ করে যা !
আজমিলের কোথায় হাসান রাগ করে না ! আজমিল কে সে মানে ! বয়েস এক হলে কি হবে আজমিলের কি একটা বোঝার শক্তি আছে সেটা অনেক বড় হাসানের থেকে !

আজমিলের বাবা পায়ে গুলি খেয়ে প্রায় পঙ্গু ! সে ওই বি এস এফ'র গুলি খেয়ে হয়েছে! ব্যথায় যত তা না কষ্ট..রাগে মাথা একেবারে আগুন হয়ে থাকে সব সময় ! রেগে সব সময় একি কথা ...

-শালা বুজরুক অফিসারটা বুঝছে না মাল পাচার বন্ধ হলে গরিব লোক খাবে কি! তাদের তো পুঁজি নাই..ব্যবসা করবে..! পরের ধনে পোদ্দারি করে যদি দু পয়সা ইনকাম হয় ..শালা তোর কোন বাড়া ভাতে আমার পা দিলাম রে ..শূইয়ারের .....! কথা টা শেষ করতে দেয় না তার বিবি জুবেদা খাতুন..
- থামো দিকিনি ...কি হবে গালি দিয়ে আর নিজের শরীর খারাপ করে ! আল্লাহ নিজে দেখবেন ..ইনসাল্লাহ!

বিকালে সবাই বাড়ি ফিরে এলে আজমিলের মা জুবেদা রাত্তির বেলা জন্য তিন ছেলে মেয়েকে শুধু জলে ভেজানো মুড়ি আর কচুর গথি সেদ্ধ করে খাওয়ায় !সঙ্গে হাসান'টাও থাকে .কালে অকালে হাসান'ও যুবেদার ছেলে হয়ে গাছে ! আজমিল দেখে আম্মি নীরবে চোখের জল ফেলছেন ! কি করবে বুঝে উঠে পারে না আজমিল ! চুপ করে থাকে আর উঠে গিয়ে আম্মির পাশে বসে থাকে ! আম্মি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় !

এদিকে আরেক বিপদ এসে নাড়া দিয়েছে ! প্রতি বছর এ সময় টা বাংলাদেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্টান ডাক্তারি পড়ার জিনিস পত্র,মানুষের হাড়গোর আর মেডিকাল যন্ত্রপাতি অর্ডার দেয় ! কিন্তু বর্ডারে নোতুন অফিসার যে হাঙ্গামা লাগিয়েছে ! হাসান এসে কাল খবর দিলো দুবার নাকি গুলি চলেছে ! বর্ডারের কাছে কোনো এক বাড়িতে সব কিছু জমা পড়ে আছে. পাচার আর হচ্ছে না !
এদিকে দিন দিন অবস্থা খারাপ দেখে মাল পাচারের শেঠ, ভাবিন ঝুনঝুনওয়ালা একদিন সন্ধেবেলা আজমিল দের বাড়িতে এসে হাজির ! হাসান'ও ছিল তখন ! আজমিলের আব্বা সাইফুদ্দিন দাওয়ায় বসে আরাম করছিল....ভাঙ্গা পা তাকে একটু সরিয়ে শেঠকে বসার জায়গা করে দিলো !
ঝুনঝুনওয়ালা ব্যবসাদার লোক..সব সময় পান খায় ! সময় নষ্ট না করে সরাসরি বল্লে..
- সাইফুদ্দিন মিঁয়া তোমার এই ছেলে দুটোকে আমার চাই ! বেশ কিছু মাল পাচারের জন্য পড়ে আছে !ডাক্তারি যন্ত্র আর কিছু হাড় গোর ! হাঁ আর একটা বড় বাক্স পুরো মানব কঙ্কালের ! সেটা কার ছিল জানো..ঐযে পাশের গ্রামে বৈষ্ণব রতন বৈরাগী ..সে মারা যায় গত মাসে ! বৈরাগীরা তো মারা গেলে দেহ জ্বালায় না ..মাটিতে পুতে দেয় ! তাকে তুলে এনে জল আসিড দিয়ে ধুয়ে আস্ত কঙ্কাল বানানো হয়েছে ! ওটা যাবে হিলি হয়ে সান্তাহার .সেখান থেকে সোজা ঢাকা রাজধানীতে ! বেশ বড় কাজ গো এটা ! দুঃখের ব্যাপার রতনটা আমায় রোজ বলত ..এবার এসব ছেড়ে চলে যাব দেশের বাড়িতে বর্ডার পেরিয়ে হিলিতে !
কথার মাঝে জুবেদা বিবি ঘোমটা মাথায় রান্নাঘর থেকে ঝামটা দিয়ে বলে..
- না..না.. ওরা যাবে না ! একেবারে ছোট পোলাপান ! আর তা ছাড়া আবহওয়া বেশ গরম এখন !
ঝুনঝুনওয়ালা ব্যবসায়ী লোক !মাথা নীচু করে বলে ..
-বিবিজান, জানি আপনি মা আর তার জন্য চিন্তা বেশি ! ওদের খাবার দাবার জোগাড় করতে আপনাকে বড় বেকায়দায় পড়তে হয় মাঝে মধ্যে ! তাবড় পরিশ্রম করতে হয়..সাইফুদ্দিনের পায়ের যা অবস্থা.. আমার তো মনে হয় আরো মাস ছয়েক লাগবে কাম কাজ ঠিক থাক করতে ! হাতে পয়সা না থাকলে আপনি সেদ্ধ ভাত ছাড়া আর কি দিতে পারবেন..না ! না ..মনে কিছু নিবেন না ! সত্যিটা মাথায় এলেও আরকি বিবিজান ! বলে গেলাম !
ঝুনঝুনওয়ালা আর কথা না বাড়িয়ে একটা কাপড়ের থলে সাইফুদ্দিনের দাওয়ায় রেখে উঠে পড়ল !
- হাঁ আর একটা কথা যেতে যেতে বলে যাই ..ওই শালা পুলিশের বাচ্চারা শিশু বা নাবালকদের উপরে গুলি ছুড়তে পারবে না...আইনে বাধা আছে !আমার কথাটা বিশ্বাস না হয় তো থানা গিয়ে একটু জিগ্যেস করে নিবেন ! আচ্ছা চলি বিবিজান !

থলেটা হাতে তুলে নেয় সাইফুদ্দিন..খুলে দ্যাখে বেশ অনেকগুলো টাকা থরে থরে সাজানো ! ফট করে গুনে ফেলে ..এক হাজার টাকা ! স্বপ্নের মতো যেন ..এক সঙ্গে দ্যাখেনি সে কোনদিন ! টাকার থলেটা জুবেদার হাতে তুলে দেয় সাইফুদ্দিন আর পাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়ে !
হাসান এতক্ষণ এক কোনে দাঁড়িয়ে বেশ মজা দেখছিল... আজমিলের কাঁধে হাত রেখে !
- কি গুরু..কি ভাবছ তুমি ! রাজী ?
- হাতে নগদ টাকা পেলে আবার কিসের চিন্তা আর ভয় রে হাসান !আমাদের তো এই কাজ করতে হবে আজ নয়তো কাল ! চল আম্মিকে বলি আজ বেশ বড় করে গোস্ত রান্না করতে ! পেট ভরে খেতে হবে! জানিস তো ভরা পেট থাকলে ভয় কম লাগে ! ভয় ডর সব পালিয়ে যায় !
ওরা প্রথম কিস্তির মালটা নিয়ে রাতে বেড়িয়ে পড়ে ! বর্ডারের প্রায় কাছে যে বাড়িটা তে মাল গুলো থাকে সেখানেই চুপ চাপ ঘাপটি মেরে বসে থাকে! সুযোগ বুঝে বস্তা গুলোকে পাচার করে দেয় ওপারের লোকটার হাতে ! ওরা একট কোড বলে ! মাল পাচার হয়ে যায় !
দিন দশেক চলে এই ভাবে ! তবে রোজ নয় !
বি এস এফ'এর জওয়ানরা জোর কদমে পাহারা দেয় মাঝ রাত অবধি..ভোরের রাতে একটু ঢিলে হয় পায়চারী ! আজমিল সেটা নজর করেছে আগে ! হাসান কে বলে ..
-দোস্ত আজ বড় বাক্স টা পাচার করতে হবে !
- কই বাত নেহি দোস্ত ..তুমি যেমন বলবে গুরু ..আমি হাজির !
একটাই বাক্স ..একটু বেশি ভারী ! আগের বস্তা গুলো একটু সহজ ছিল..যা হোক...আজকেরটা হলে বেশ কয়েকদিন যুত করা যাবে ! আম্মির হাতে যা টাকা তুলে দেয়া গ্যাছে তা দিয়ে আম্মি আরো প্রায় দুই তিন মাস আরামে চালিয়ে নেবে !
-চল হাসান ..হাত লাগা ! মাঝরাতের আগেই পৌছাতে হবে সেই বাড়িটার পেছনে ! সুযোগ দেখে ঐপারে বাস খালাস !
- আজমিল আজ তো টাকার অঙ্ক তাও বড় সাত হাজার নিয়ে ঝুনঝুনওয়ালাকে দিতে হবে !
- হাঁ . তুই আর কথা বাড়াস না চল.. এগিয়ে চল !
ওপারের লোকটা কোড বল্লো ! মাল ডেলিভারি হয়ে গেল! হাসান বলে ..দাদা টাকাটা দিন এবার !
কোড বলা লোকটা বলে ..
- হালার পো..ট্যাহা এহন হবে টবে না ! যা এহন পালা গিয়া পড়ে দেখন যাবে ক্ষণ !
আজমিল ভয়ে কেঁপে উঠলো.ঝুনঝুনওয়ালা বার বার বলে দিয়েছে টাকা না নিয়ে আসলে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবে !
- দেখ দাদা ..ট্যাহা না নিয়ে গেলে তো মারা পড়ব !
সেই মাত্তবর লোকটা আজমিলের পেটে একটা লাথি কষিয়ে দেয় ! বন্ধুর এ অবস্থা দেখে হাসান চেচিয়ে ওঠে !
- হালার পো তুই হালা ! পয়সা না দিয়ে গেলে ভালো হবে না কিন্তু !
মাত্তবর টা এবার চেঁচিয়ে ওঠে !
- এখনো মুখের দুধের গন্ধ যায় নাই হালার পো এরই মধ্যে এই লাইনে নাইমা পড়ছস ! মাত্তবরের হাতে সময় ও কম ! সান্তাহার অনেক দুরের পথ সূর্য্য উঠার আগেই পৌছাতে হবে !
এর মধ্যে দুরে অনেক আলো দেখ যেতে লাগলো ! মনে হলো টর্চের আলো ! মাত্তবর লোকটা আজমিলের হাতে হাজার দুয়েক টাকা গুজে দিয়ে বল্লো শেঠকে বলবি আমি পড়ে এসে রফা করব !এই বলে পিছনে রাখা জীপটাতে উঠে জোরে চালিয়ে দিলো !
তখন ভোর হয়ে এসেছে প্রায় ! ভোরের দিকে গাড়ি চালকের ছোখে ঘুম ঘুম আসাতে সে দুরন্ত গতিতে সামনে থেমে থাকা একটা লরির পেছনে জোরে ধাক্কা মারলো !

আজমিল আর হাসান ফিরে যেতে যেতে গাড়ি ধাক্কা খাওয়ার প্রচন্ড শব্দে চমকে উঠলো !
মাত্তবর লোকটা কোথায় ছিটকে পড়ে রইলো কে জানে ! জীপটা উল্টে গিয়ে পড়লে পাশের জমিটার ভেতরে ! জমিটা চাষের জন্য লাঙ্গল দিয়ে মাটি নরম করে রেখেছিল চাষীরা ! জীপটা বার দুয়েক পালটি খেয়ে মুখ থুবরে পড়ে রইলো! জীপের পেছনে যে কঙ্কালের বাক্স টা ছিল সেটা জীপের পেছনে গর্ত হওয়া জমির ভেতরে আস্তে আস্তে ঢুকে গেল !
আজমিল আর হাসান অনেক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখল এসব ! তারপর প্রায় ছুটতে ছুটতে বাড়ি এসে পড়ল তখন প্রায় সকাল হয়ে এসেছে !
এসে দেখে ... ঝুনঝুনওয়ালা বাড়িতেই বসে আছে আজ ! যা টাকা পেয়েছিল ঝুনঝুনওয়ালা হাতে তুলে দিয়ে আজমিল সমস্ত বিবরণ দিলো ! ঝুনঝুনওয়ালা চুপ করে শুনলো সো কথা ! যাবার আগে সাইফুদ্দিন আর জুবেদা বিবি কে বলে গেল
- বিবিজান .. একেই বলে খোদার কাছে শেষ ইচ্ছা ! সব সময় শুনেন ঈশ্বর ! তোমাদের তো আগেই বলেছি ওই কঙ্কালটা রতন বৈরাগীর ছিল ! ওর শেষ ইচ্ছা ছিল ওর নিজের দেশ গিয়ে ওকে যেন কবর দেয়া হয়! সায়ফুইদ্দিন দ্যাখো, ইশ্বরের কি লীলা ..নিজের জমিতে কবর হোল..... কিন্তু মানুষ কবর না হয়ে কঙ্কাল কবর হয়ে রইলো !
যে হাজার দুয়েক টাকাটা আজমিল তুলে দিয়েছিল ঝুনঝুনওয়ালার হাতে ...সেটা সৈফুদ্দিনের দাওয়ায় রেখে দিলো আর তার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ছাতা বগল দাবা করে সে বেড়িয়ে গেল !

তার একটু পরে খুব জোরে বৃষ্টি নামলো...কিন্তু কি শান্ত কি সুন্দর ধারায় ! আহা ..মনে হলে সমস্ত পাপ ধুয়ে রতন বৈরাগীর কবর পবিত্র করে দিলো আকাশ !

রাজর্ষি ঘোষ


নীল

একটা নীল আকাশের তলায় একটা নীল সাগর। আর তারই বুকে মুখ গুঁজে একটা ছোট্টো সাদা ঝিনুক। ঝিনুকটা ভীষণ ভালবাসত সাগরকে; বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়েছিল সে নীল সাগরের জল। সাগরও তার বিশালতায় ভালবেসে আশ্রয় দিয়েছিল ঝিনুকটাকে। সাগরের সাথেই ঝিনুকের খেলা... সাগরের সাথেই ঝিনুকের যত হাসি-কান্না, মান-অভিমান। আর সে কি হুটোপাটিটাই না করত দুজনে... একে অন্যের হাত ধরে টানাটানি, মারামারি, চুলোচুলি... কিন্তু, তাও দিনের শেষে ক্লান্ত ঝিনুক মুখ গুঁজে দিত সাগরের বুকে। কান্নার সুরে জিজ্ঞেস করত, আমায় ছেড়ে যাবে না তো? সাগরও একরাশ ঘোলাটে ভালবাসা চোখে টেনে নিয়ে বলত, পাগল? তোকে ছাড়া আমি বাঁচব নাকি?

ক্রমে ঝিনুক তার সবকিছু উজার করে দেয় সাগরের কাছে... দেহে টেনে নেয় সাগরের নোনা জল। নিজের রক্তে মেশায় সাগরের নীল। সেদিন রাতে কি কষ্টটাই না পেয়েছিল ঝিনুক... বুকের মাঝে আগুন জ্বলেছিল যেন। আর সেই আগুনে পুড়েছিল ঝিনুকের মনও। সারারাত অঝোরে কেঁদেছিল ঝিনুক... যন্ত্রণাক্লিষ্ট শরীরে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল সাগরকে বারেবার। ঝিনুকের কষ্ট দেখে সাগর তাকে বুকে টেনে নেয়, আদর করে বলে, আর কাঁদে না লক্ষীটি। এই তো আমি আছি তোমার পাশে। এই কান মুলছি দেখ, আর কখ্‌খ্‌নো তোমার সাথে দুষ্টুমি করব না। ঝিনুক নীল সাগরের মত নীল চোখ মেলে জিজ্ঞেস করে, সত্যি বলছ? আর সাগরও ঝিনুকের চোখের জল-টল মুছে, কপালে একটা ছোট্টো চুমু খেয়ে উত্তর দেয়, সত্যি সত্যি সত্যি... এই তিন সত্যি করলাম। কেমন, হল তো এবার?

তারপর একদিন ঝড় উঠল। সেদিনও সাগরের ঢেউয়ের সাথে লুকোচুরি খেলছিল ঝিনুক। ঢেউয়ের তালে কখনো ভাসে – কখনো ডোবে, কখনো ওঠে - কখনো নামে, আবার কখনো ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে সাগরকে। সাগর খেলার ছলেই ঝিনুককে দূরে ঠেলে দিয়ে বলেছিল, যা তো দেখি কেমন লুকোতে পারিস। যত দূরে যাস, তোকে খুঁজে আমি বার করবই। কিন্তু, ঝিনুক সেই যে লুকোলো, আর ফিরল না। দমকা হাওয়া কোথায় যে ভাসিয়ে নিয়ে গেল ঝিনুককে, সাগর তার আর খোঁজই পেল না।

সাগর কিন্তু চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখে নি। প্রবালে, শৈবালে, রঙ-বেরঙের মাছের ভিড়ে সে জিজ্ঞেস করে বেড়াল, আমার ঝিনুককে দেখেছ? তারা কেউ সত্যি ভালবাসায়, কেউ চিন্তায়, কেউ হিংসায়, কেউ মেকি সহানুভূতিতে, আবার কেউ নিছক কৌতূহলে, মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, না তো। আমাদের ছোট্টো ঝিনুক? তুমি ওকে হারিয়ে ফেলেছ বুঝি? আমার কাছে তো লুকোয় নি এসে। দেখা পেলে ঠিক বলব, সাগর খুঁজছিল তোমাকে। সাগর চোখের জল মুছে বলে, বোলো কিন্তু।

সাগর ভাবল, এ সব ঝিনুকের শয়তানি। আমাকে শাস্তি দিতেই এমন জায়গায় লুকিয়েছে, আমার চোখ যার নাগাল পায় না। ঠিক আছে, থাকুক লুকিয়ে। খুঁজব না ওকে। ফিরে তো আসবেই। আবার হাসতে হাসতে ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার বুকে। তখন দূরে সরিয়ে দেব। কথা বলব না সারাদিন। কিন্তু, ঝিনুক ফিরে এল না।

সারারাত গুমরে গুমরে কেঁদেছিল সাগর। বুকের যন্ত্রণা ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়েছিল জ্যোৎস্না-স্নাত বালুকাবেলায়, কালো পাথরের অন্ধকার কোণে। ফেনা হয়ে গর্জে উঠেছিল... চাঁদের আলোয় রূপোলি বালিকে আঁকড়ে ধরে ছটফট করেছিল সারাটা রাত। সেদিন সাগরের তান্ডবে কত যে নৌকাডুবি হল, কত যে হাজারে হাজারে লোক ঘরছাড়া হল, তার আর ইয়ত্তা নেই। কিন্তু তাও একসময় ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত সাগর শান্তি পেল নিজের শীতলতায়... ঘুমিয়ে পড়ল ঝিনুককে হারানোর দুঃখ বুকের মাঝে নিয়ে।

*************

সময় কেটে যায়। এখন সাগরের বুকে বাসা বেঁধেছে আরো নতুন কিছু ঝিনুক। তাদের কোনোটা লাল, কোনোটা হলদে, কোনোটা কালো, আবার একটা সাদাও। সাগর ঝিনুকগুলোকে নিয়ে সুখে আছে। ঝিনুকগুলো সারাদিন সাগরের সাথে লুকোচুরি খেলে... কখনো হাসে, কখনো কাঁদে, আবার কখনো ভালবেসে মুখ লুকোয় সাগরের বুকে। সাগর ভালো আছে।

অনেকদিন পর, সোনালী বালুতটে খেলা করতে গিয়ে একটা সাদা ঝিনুক খুঁজে পায় দুটো নুলিয়া বাচ্চা। একটা ছোট্ট সাদা ঝিনুক... একলা... অসহায়... মৃত। বাচ্চাদুটো সাগরের মত নীল, অতল চোখে অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখে, ঝিনুকটার স্খলিত, শিথিল আঁচলের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে একটা ছোট্ট মুক্তো। মুক্তোটার রঙ সাগরের মতই নীল।

ইভান অরক্ষিত

গল্পটি এক সম্ভ্রান্ত কুকুরকে নিয়ে

পর্ব -

একা তো রে ভাই মানুষ থাকতেই পারে না । ঐ যে কে না বলেছিলেন , কি নাম লোকটার ... Man is by nature a social and political being. এখন আপনি একাকীত্বটি কিভাবে দূর করবেন ? সেটা আপনার দর্শন এর উপর নির্ভর করে , Because man is also an economical & philosophical being . কিন্তু commercial being মানুষ ছিল না । tread এসেছে traders তৈরি হয়েছে । এইটা man made , man made বলতে সমাজ হিসেবে বস্তুর রুপান্তরের প্রক্রিয়ার মধ্যে এইটা অন্তর্গত ।

সেদিন বাংলিশ , হিংলিশ এর সমালোচনা দেখলাম , যুক্তি আছে আবার আমার কাছে anti logic , dialectical opposite ও আছে । সেটা অধিক শক্তিশালী তার চেয়ে বড় কথা সমাধানটি বাতলে দেয়ার ক্ষমতা আছে । অতএব আপাতত এইটা পড়েন সে আলোচনা এর অন্তর্গত নয় । স্বভাবের ত্রুটি হেতু আমি সহজে গল্প তার প্রাসঙ্গিকতা থেকে অংকুরিত করতে পারি না । দক্ষতার অভাব হতে পারে , রোগ হওয়ারও সম্ভাবনা আছে ।


পর্ব - ২

গল্পটি এক সম্ভ্রান্ত কুকুরকে নিয়ে , তার নাম ক্রেগা । এর প্রভুর নাম ম্যাথিউ কুবিন । ক্রেগারা ছিলেন ১ ভাই ৫ বোন । ৫ বোনের নাম যথাক্রমে : পিম্পী , ইউরোপা , নাইলেপ্থা , লো এবং লিন্ডা । কুকুরদের মধ্যে সহোদর সহোদরা পরস্পর যৌন মিলনের বৈধতা বিদ্যমান । এই প্রথাটি মানব সমাজেও প্রচলিত ছিল । ইসলামের স্বীকৃত দর্শনমতে প্রথম পুরুষ আদমের সন্তানেরা এইভাবে জন্মগ্রহণ করেন যে প্রথমে একজন পুরুষ তারপর তার সহোদরা স্ত্রী এবঙ যথাক্রমে । তো এই নিয়ে একটা মারামারি লেগে যায় , একজন অন্য সহোদরাকে দখল করতে চান কেননা তার নারীটিকে তিনি মেনে নিতে চান নি । এই হলো ইসলামের হিসাবে পৃথিবীতে মানুষের আল্লাহর আদেশ অমান্য করার দ্বিতীয় ঘটনা । পরে মানুষ বিস্তৃত হলে এই আদেশ হয় যে সহোদরা কে স্ত্রীরুপে গ্রহন করা হারাম , অর্থাৎ দর্শনটি বা ধর্মটি তার বিকাশের এই পর্যায়ে সেটা রহিত করলো । তবে কেবল মানব সমাজে । মানবেতর প্রানীর ক্ষেত্রে কোনো বিধান ইসলামে নেই , অর্থাৎ তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের প্রতি আদেশ নেই কি নিষেধ ও নেই । তো সেই সম্ভ্রান্ত কুকুর লেড্রা , তার যন্ত্রকুশলী ( Mechanical Engineer ) ম্যথিউ কুবিনের ক্রীত ও পালিত হয়ে আসলেন ৭৮৯ পাউন্ড এর বিনিময় হিসেবে । তার ৫ বোনের যা হলো তা নিম্নরূপ :

পিম্পী ক্যালিফোর্নিইয়াতে গেলেন মারিয়া প্যাট্রোস্কায়া এর পরিবারে । তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছেন , Boyfriend , অধ্যাপক নাম ইউনুস পাঠান , পাকিস্তানের বিকৃত মুসলমান পরিবারে এক কুলাংগার কুপুত্র ।

ইউরোপা ও নাইলেপ্থা মারা গেলেন Dog Farm এর Van এর নীচে চাপা পড়ে । এক বিকেলে খাবারের ভ্যানটি ফার্ম এ ঢুকছিল । এরা দুই বোন একটি রাবারের বল নিয়ে খেলছিল । Van চালক দেখতে পায় নি , পাবার কথাও না অথচ দুর্ঘটনাটির জন্য বেচারা চাক্রিটি হারাল । কুকুরগুলো সাম্লানোর দ্বায়িত্ব যার ছিল সেই ভারতীয় মেয়েটি সুমান যোশী তাকে মাত্র ২ /১ টা কথা বলা হল । যাক সেটা অন্য একটি অবৈধ প্রথার বাস্তবায়নের কুফল । অন্য গল্প ।

লো ১৪২৫ পাউন্ডে বিক্রি হলেন , Because she was the most beautiful and gentle one . মালিক ব্রিটিশ , পেশা জুয়া , অর্থাৎ সিঙ্গাপুরে একটি ক্যাসিনো চালান । ক্যাসিনোর স্লোগান বড়ো করে লিখে রেখেছে “Everyone Looses”.

লিন্ডা গেলো দুবাই , আব্দুল্লাহ বিন হিজ্জাজ বিন জুবায়ের এর স্ত্রী কিনলেন । তিনি অবশ্য জানেন যে কেবলমাত্র প্রহরী হিসেবে ইসলামে কুকুর পোষা যায়েয অর্থাৎ স্বীকৃত , তবে সেটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না । উল্লেক্ষ্য যে তার বাসায় এক বাংলাদেশী ছোকরাকে তিনি রেখেছেন ব্যাস কুকুরটাকে যত্নআত্তি করার জন্য । একবার কিছু টাকা দেখিয়ে রাজীও করাতে চেয়েছিলেন , ছেলেটা ভাল বলে পরে টুপি কিনে দিলেন , আতরও কিনে দিলেন । আনোয়ার মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলো । যাক এই যাত্রায় আল্লা রাসুলের দয়ায় বেছে গেল । মনে মনে বলল আলহামদুলিল্লাহ !


পর্ব -

ম্যাথিউ কুবিন একটি গাড়ী তৈরির কারখানায় চাকরি পেলেন জার্মানীতে । অভদ্র অন্যায় জাতিগত-অভিমান এদের মধ্যে চরম মাত্রায় বিদ্যমান । হিটলারের কুশিক্ষার বিষ আজো এদের মাঝে কাজ করছে । কার্ল মার্ক্স এর নামগন্ধটি নেই। অবশ্য তার পোস্ট , বেতন আর দামী গাড়ীটি দেখে কেউ তেমন গায়ে পড়ে লাগতে আসে না । ক্রেগা বেশ আনন্দে আছে। বিশেষ করে এই বিশাল বাড়ীটি । বাড়ীর পাশে বড় অপরিচিত গাছটি তার বেশ লাগে । কুবিন রোজ সন্ধ্যায় মদ খেতে বসে এখানে এসে এলাকার এক ফালতু ডাক্তারের কাছ থকে গাজাও খেতে শিখেছে । ডাক্তার এর নাম ভন মরগান, বড়ই শ্রুতিকটু নামটি । ক্রেগা একে সহ্য করতে পারে না । প্রভূ আঘাত পাবেন বলে কিছু বলে না নইলে এর কলিজাটা ছিড়ে বের করতে ক্রেগার ২০ মিনিটের বেশি লাগবে না ।


মৌ দাশগুপ্তা

ময়না কথা কয় না


হতকুচ্ছিত দেখতে বলে বিয়ে হয়নি মদন মুদির বড় মেয়ে ময়নার।বাপ মা অনেক চেষ্টা চরিত্তির করেও ময়নার বর জোটাতে পারে নি।বয়স তো আর বসে থাকে না।ওর পিঠোপিঠি দুই বোন আয়না আর গয়না বিয়ে থা করে রীতিমত ছেলেপুলের মা হয়ে ঘোর সংসারী।একা ময়নাই বাপ মার গলার কাঁটা, চোখের বালি হয়ে এর কথা তাকে আর তার কথা একে লাগিয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের এ-দোর ও-দোর ঘুরে বেড়াচ্ছে।কত মানত,তাবিজ,মাদুলী,কিন্তু ময়নার বিয়ের ফুল আর ফোটে নি।

সিঁদুরে বড় লোভ মেয়েটার,আহা, সধবা মানুষ কেমন ডগমগ করে সিঁথি ভরে সিঁদুর পড়ে।ঠাকুর পূজোর সিঁদুর নিয়ে তিলক কাটার ছলে নিজের সিঁথি ঘেঁষে ফোঁটা কাটে ময়না।রঙ জ্বলা আয়নাটার সামনে বিহ্বল হয়ে দাঁড়ায় , মাথায় ঘোমটা তুলে দিয়ে ঘুরে ফিরে দেখে সিঁদুর পরে কেমন মানাচ্ছে।সিঁথিতে একটু সিঁদুরের ছোঁয়ায় নিজেই নিজেকে চিনতে পারেনা মেয়েটা।বোনেরা মুখ টিপে হাসে।মা চোখের জল চেপে দাঁত কিড়মিড় করে। বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে যায়।পাড়াপড়শীতে ক্ষ্যাপায়।

ময়না বোঝে না পুরুষমানুষ এত বোকা হয় কেন? না হয় ময়নার মুখটা হতকুচ্ছিত।কিন্তু ওর মনটা? সেটা তো কেউ দেখে না! কজন পারে ওর মত গায়ে তরে খাটতে? নকশী কাঁথায় নিপুণ ফোঁড়ে সেলাই করতে?

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রেললাইন ধরে পায়ে হেঁটে বাজার থেকে ঘরে ফিরছিল ময়না।পিছন থেকে ছুটে আসা ট্রেনটা দেখতে পায়নি , নাকি দেখেও সরতে পারেনি, সেটা ও কাউকে জানিয়ে যায়নি।বোনেরা কাঁদতে কাঁদতে দিদিকে নতুন কাপড় দিয়ে ঢেকে সাজিয়ে দিচ্ছিল, দেহটা একটু বিকৃত হয়নি , শুধু ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে মাথার পেছনে জোর চোট লেগেছিল।রক্তে মাখামাখি সিঁথি, চুল,কপালে চন্দনের টিপ, নতুন শাড়ী, ফুলের মালা, ময়নার বড় কাঙ্খিত সম্পদে সেজে উঠছিল ওর প্রাণহীন দেহটা।বাপের বাড়ী ছেড়ে নতুন বাড়ীতে যাচ্ছে বলেই বোধহয় হতকুচ্ছিত দেখতে মেয়েটার মুখটা কেমন হাসিমুখ বলে মনে হচ্ছিল সবার।

অমলেন্দু চন্দ


তিনটি কবিতা



দিগ্বলয়

কষ্টের উড়ান পাখা মেলে দিই

কাঁটাঝোপ অস্থির যন্ত্রণার মৃদঙ্গ নিঃশ্বাস
দিগ্বলয়ে মেলে রাখা থ্যাঁতলানো স্বপ্নের কুঁড়ি
অদ্ভুত বিপরীত দুই দিকে উন্মাদ টানটানি করে
এখানে অনন্ত একা চেয়ে দেখে স্বপ্ন আয়নায়.
পারা চটে গিয়ে এক উচাটন ভাঙা চোরা জবালাল পোড়াগন্ধ রূপ -
সময় হাঁটছে একা, বইবার সাধ ছিল তাঁর ...
এখন অন্যত্র থাকে স্বপ্ন সন্ধানে -
যদি কেউ ভেসে যেতে চায়।


আগমনী

এক চিলতে রোদের বাথানে মেঘগুলো
জড় হয়ে টুপ টাপ চুপ চাপ ঘন হচ্ছিল
বিকেলের বারান্দায়...
এক হাতে নেবে আসা আঁধার ছিলিম

অন্য হাতে ডুবে যাওয়া সূর্যের রূপটান আলোর ঝিলিক
দিনটার গভীর আবেশ
সময়ের উড়ান যেন চাঁদের অপেক্ষায় লিপস্টিক ঠোঁট
একবুক জল নিয়ে মেঘগুলো পৃথিবীর দিকে
বড় মায়ায় তাকায়
মাটির অপক্ষা বর্ষার আদর খেয়ে
ধুলো গন্ধ সোঁদা স্বপ্নে ভরে যাবে
পৃথিবী সুধন্যা হবে
সময়ের ঘর তাই মেঘের গম্বুজে


শিল্পী

স্মৃতির চারু ডাক - কিছুটা উসখুসানি - অল্প নাভিশ্বাস
কিছু কিছু স্বপ্ন, প্রেম, কলকণ্ঠ হাঁসি, ব্যাক্তিগত গোপন রমণী -
অতঃপর উপাংশে নগ্নতার মুখ থেকে
পা অবধি খুটিয়ে দেখেছি -
খানদানি চর্যাপদী কদগ্নি মতলব
কিছুটা শিল্পীর চোখ বাকিটা অনঙ্গের অজা ইরাদা
আমি তার সারাৎসারে শুধু ডীপ ইয়েলো ভরে গেছি ...

রাজর্ষি ঘোষ

অনিমিখঃ বিসর্জন


আমার নিজস্ব গান বৃষ্টি হয় না...
আঙুলের কোণে লেগে থাকে ধান দুব্যোর হিমেল গন্ধ;
এক ছিপ মেঘ যেখানে পায়রা হয়ে যায়,
আমি ভেসে থাকি সেখানে আন্তরিক উজ্জ্বল মানচিত্র হয়ে।

আমার সবটুকু দেয়ালা জুড়ে ওদের ছায়া রাজপথ
সৌম্যদর্শন ব্যক্ত ষোড়শী দিন, ধোঁয়াশা
আপক্ক নির্বিকার চেতনা ডানা মেলে রক্তিম আকাশে।

তবুও নিবিড় সম্পর্কটুকু পারদ হলে
ঘুমপরী রাত জাগে অসহায় পাখিদের ঠোঁটে অনিমিখ।
দলছুট ঘর খোঁজে বুনোহাঁস।

তারপর...

বেশ কিছু আমিত্ব বিসর্জনের পর ঘুম ভাঙলে কাশফুল,
সে আসবে বিধবার বেশে মাঠ সাদা করে।
আগমনী ক্ষয়ে গেলে দূষিত জলে
এক ঝাঁক ফ্লেমিংগো আজ পরিযায়ী হবে উত্তর কলকাতায়।

আমি বিষাক্ত পৃথিবীর মানুষ।
কার্বন মনোক্সাইড শ্বাস ঠেলে হেঁটে যাব অমরত্বের পথে,
জ্যামিতিক চক্রব্যূহে।

আমাকে সীমানা দিও না।

অলক বিশ্বাস

রাধা


তোমার সাথে যাচ্ছি আমি চাঁদ
পড়েছি বাধা তোমার পাতা ফাঁদে
হৃদয়টুকু আছে বলেই জেনো
এই জীবনে তাই হয়েছ রাধে।

একটু একটু হচ্ছি উজাড় যত
সকাল, দুপুর কিম্বা গভীর রাত
দেখছি আছো কান্না এবং গানে
নিঃস্ব হতে তোমার হাতে হাত।

অনুপম দাশশর্মা

বিষ-দ্রোহ


দ্রোহকাল ক্ষিপ্ত দাঁতে ভীতি ছড়ায় আলজিভে
নিষ্পাপ শিশুমন বাঁকা সভ্যতায় বাড়ে
কেন আজও আত্মা বোঝে না
মাতৃজঠর থাক মঙ্গলকরে!
জানলার শিক ধরে আকাশে শান্তি খোঁজে
কেঁপে ওঠা অশক্তা বৃদ্ধাবাসে।

কুশিক্ষার শেকড়ে সুপ্ত অমানুষের চেহারা
মাতৃদুগ্ধ আর পারে না সুস্থ সমাজকে উপহার দিতে
স্বার্থপর আর্থব্যবস্থা আস্থাহীন সাম্যের যুক্তিতে,
তবু সন্তান থাক দুধে ভাতে কেন চাইবে না
নাড়ি ছেঁড়া প্রাণে!

তাই বুঝি আকাশ মেঘলা হয় পৌঢ়ত্বের উপবনে
গোনাগুনতি মার্বেল ঠাঁই চিরকাল থাকে
শুধু শীর্ণকায় দুই হাত বৃদ্ধাবাসে কাঁদে..!

মিলন চ্যাটার্জি

ধ্বস্ত


আমার নষ্ট ঘরে বসে আছে
আমার মত কেউ !
হাতের স্থানে হাতই আছে ,পায়ের স্থানে পা
আপন মনে লুকিয়ে থেকে ,সুর সাধছে সা ।

আমার নষ্ট ঘরে বসে আছে

আমার মত কেউ !

রত্নদীপা দে ঘোষ

পনেরো লাইন বৃক্ষ


নোম্যান্সল্যান্ডের বৃক্ষ বেষ্টন করে থাকে মেঘশাঁসবীজ
শিশু বৃক্ষের গায়ে দোলনাকেবল মিছিলরেণু
বৃদ্ধ বৃক্ষের ছাল চামড়া দিয়ে ব্যালট আর বুলেট বানায় মানুষ
আলস্য ভেঙে নদী থেকে উঠে আসা বৃক্ষের সীমান্ত ক্লোরোফিল
একঝাঁকবৃক্ষ + একতিলআলো = কিউসেক জলজোনাকি
বৃক্ষ পাখিসমাজের একমাত্র মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং
দু ঘোড়সওয়ারের মাঝখানে বৃক্ষ তিন শাখার আস্তাবল
মরুবৃক্ষের পাতারা ঘুমন্ত গুটিপোকা
বৃক্ষের দুই কাঁধে চাঁদ ওঠার শব্দ
দুটি বৃক্ষের সফল সঙ্গমে জন্ম ন্যায় জেনরোদ
ট্রামলাইনে বয়ে যাওয়া বৃক্ষ ভোর খায় পেটচুক্তিতে
মেয়েটির লাল ঠোঁটে বৃক্ষের সীলমারা চিঠি
বৃক্ষের সিন্দুকে তরল সুতোর মৌচাক
বসন্তবউরির ঝড়ে বৃক্ষের মাইওপিক চোখ থেমেছে শূন্যে
বৃক্ষ ইশ্বররমণীর অত্যন্ত সাধের মলিকিউলার কিচেন

সুমিত রঞ্জন দাস

আশা


অনামিকা, অনিকেত, এরা সবাই জাল বুনে গেছে
ঝরা পাতায়; শুকনো দেহে অতীতে যাবার আগে
এরা বোঝে ভালোবাসা, মৃত্যুর স্বাদ
স্মৃতি হয়ে প্রেমে, কালের স্রোতে;

আজ শহরে রাত বদলায় তন্দুরী ওভেনে
শ্যাম্পেনের ফোয়ারায় আর
কামিনীর কোলে,
শিশির ভেজা পিচ রাস্তায় ...

একদিন দেখে নিও এরাই আবার মানুষ হবে
গোলাপের পাপড়ির খবর শোনাবে।

মৌমিতা মণ্ডল

আগ্রাসন


ইদানীং তোমাকে ছোবার ইচ্ছাটা দেবোত্তর সম্পত্তি
আগ্রাসনের মত বাড়ছে , এসব বললেই দাঁতহীন
ঠাকুমা বিয়ের প্রস্তাব এলে যেমন হাসেন অবিকল
তেমন হেসে উঠবে , আমিও মাজা পোকাই যে ধান
নষ্ট ক'রে কৃষি বিশেষজ্ঞের মত বোঝাতে চাইলে তুমি
কৃষকের মত মাথা নেড়ে বলবে রাখুন এসব --

প্রত্যেক বলিষ্ঠ পুরুষই বোধহয় কোথাও এসে ঘি এর
মত গলে যেতে চাই - মমতায় কিম্বা উত্তাপে
আর প্রজন্ম ধরে কেঁচোর অন্ধ অনুকরণে
ঢুকে যেতে চাই নারীর অন্দরে ; নাহ , এসব বলিনা
তোমাকে , শ্যাওড়া গাছের পেতবুড়ি ভয়ই দ্যাখাই না শুধু
কাকে প্রেম বলে কাকে বলে মায়া মনে রেখেছে পূর্বজন্মের ।

সমগ্র পুরুষালী অভিশাপ নিয়ে দৃষ্টিফেলি লাবণ্যের সৃষ্টিতে
তুমি গর্হিত কাজ ভাবো , আমি দৃষ্টিতে সুখ লিখি !

শুভ বাবর

বিষ দাঁতের লাল সিগন্যাল


কেউ একজন পিছু ছাড়েনা নজরবন্দি প্রতিদিন

কুয়াশাতাঁবু পথের সীমানা দেওয়াল ডিঙ্গিয়েই রোদ্দুর
আগলে রাখা ছায়াবন্দি
হিংসেগুলো জ্যামিতিক ত্রিভুজ নদী ,
বাতাসের ক্যাম্পে নাগরদোলা মদ্যপ মদালসা ঘূর্ণি ,
জলজ প্রান পকেটে
দমবাজি শিরায় উপশিরা টান টান উপবাস
জোয়ার এলেই মাছধরা চলে উৎসব
আষাঢ়ের মানেই ছিঁচকে কাঁদনে ৷

মাঝি গুণ টানে কিনারের সন্ধান

দুআঙ্গুলের ফাঁকে বিষমাখা তীর , বন্ধনহীন নিহত গোলাপ
চোখে ভেসে ভেসে উঠে গতকালের রাত ,খাঁচায় ময়না পাখি
তুমুল বৃষ্টির নিশানায় মধুবাতাস
জলের শব্দ কান পেতে শুনে জলকেলী তরঙ্গ সহচর
টুং টাং কম্পনে
গোলক ধাঁধাঁর পেন্ডুলাম দুলে দুলে রুদ্রমূর্তি
শিকারি গেরিলার পালায়ন খুব ভোরে
প্যারাসুটে পাখির ডানা চিৎকার চোখের নিমিষে সীমানা পাড় ৷

চাঁদতারা উঠোনে সূর্য নাচবে ,পিষবে বিষ দাঁতে নীল কাঁমড়

আগুন আলোর
ধ্যানে প্রতিক্ষার রেশমঘর অন্ধকারে জ্ঞানপাপী শিকড়
বাস্তুহারা ইশারায় ফেলে দাও শক্তি তরবারি জঙ্গল
হারামী লাল ক্ষুধা
সোনাঝরা কুহেলির ভুল ইশারায় স্বপ্নপূরন
জাহাজভর্তি প্রেম নিয়ে পিপীলিকা নোঙ্গর মনিমাণিক্য ভরপুর
মাস্তুলে রক্তজমা হানিমুন
নিত্য শৈশবে জমকালো ভূত পাহাড়ে ঝর্না জমজ প্রেম ৷

অলীক রৌদ্রছায়া নিদ্রাকুসুম যমকালো মোঘলের তরবারি

আঙুলে আঙুলে ফুটে আঙুল কারুকাজ
বুকের ভিতর সন্ধি ডিঙিয়ে সমুদ্রগন্ধ ভরা দূঃসাহস
জলে পাতালে শৈশব কুড়ায় কাঁঠবিড়াল
ঝর্নার অস্থির কন্ঠ ছূয়ে নেভানো আগুনে দমকলের লাল সিগন্যাল ৷

দূর্গা রাই

উচাটন


ভালোবাসা নেই, ধূসর আঁধারে
হলদেটে প্রেমের সিম্ফনি,
আষাঢ়ের নীরব নির্ঝরে
বিষণ্ণ জনপদ জানে
একদিন ওষ্ঠ ও মদিরার আলোড়নে
ছিল চেতনার পূর্ণ গ্রাসি শিহরন।
কুহু যামিনীর বুকে
চাঁদের ছুঁয়ে যাওয়া,
গলে যাওয়া, ভেসে যাওয়া
বিবাগী উচাটন।
চাঁদ ছিল, রাত ছিল,
ছিল আলিখিতি চুমু
আকাশের ক্যানভাসে আনমন।
বুনো বাসনায় আগ্রাসি জিতে যাওয়া
তাও বারে বারে হেরে যাওয়া
আমরণ
ভালোবাসা নেই, তাও অকাতরে
ঝরে পড়ি ভালবাসাহীন
স্মৃতির অথই গহ্বরে ।

ধ্রুব

ইচ্ছে, মর্জি, উপেক্ষা আর বিনোদন



কি বলব? অনেক কথা পাল্টায়, মনে হয় যেন ফিল্টারে মোড়ানো
আমি ছোট ছোট ছন্দে পড়া বৃষ্টি দেখি
লেম্প পোস্টের আলো একলা ভিজে উদাস মনে
আমাদের ইচ্ছে, মর্জি, উপেক্ষা আর বিনোদন..

বয়সগুলো লজ্জাহীন , আর মাতাল রাত অন্ধকার তীর্য
বেস্ততা, সৃতির পাতা একসাথে ডুব, প্রমোদিনী নেশা
কামনা- চাহিদার ছ - রা- ছো - ড়ি, একমুখী ছলনা
জীবন রং উজ্জল, বাহারী, ক্লান্তিহীন - রুপরেশ.

চার পায়ের আবোল-তাবোল ছাপ, নিজের সময় আর জগত
জলছে রাত্রি পেয়ালা ভরা, রঙিন দেয়াল
চোখ ঘুমহীন উথাল পাথাল নজর ছন্দে
রাত আজ সাবালকের, ফুর্তি আর লীলাখেলার.

রাস্তা ভিজায় ছন্দের বৃষ্টি, রাত পাখিরা বাউন্ডুলে
ঘড়ির কাটা ইচ্ছেমতন এদিক ওদিক যৌবন টানে,
বাহারী লেবাস, কড়া পারফিউম, সাদা ধোয়া
সুখ-সপ্ন শান্তি নিখোজ , তীব্র ক্ষুধা
রক্তনাচ শরীর দোলে ঝিম ঝিম আর ইতিহাসে
ছটফট করে পিপাসার চোখ- কান-হাত-ঠোট.

বলা শেষ? কই না-তো, এ কেবল শুরু
পুড়বে মানুষ আগুন - জলে তুই আমি আমরা,
বেহায়া বয়স চাহিদার আর হিসেবের
সব ফেলে যখনি পালাই, অন্ধকার ডাকে তারস্বরে
আমি নিরব রাত চাই ঝুম ঝুম বৃষ্টির সাথে
আমি আসছি ফিরে ছন্দে তালে আর আমাতে
হিসেবহীন আবেগের এক পশলা চাহনিতে, নিরন্তর.

সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী

দুধসাদা দুপুরের কাব্য


নাচতে থাকা লক্ষ পাতায়
ঠিকরে ওঠে রোদ্দুর
আকাশ কাঁপে তিরতিরিয়ে
মেঘমার্চের ফাঁকে

ভর্তি পেটে দিবানিদ্রায়
ঝুলছে কয়েক পাখি
কয়েক আবার ঝিলমিলিয়ে
রামধনুকে খোঁজে

দশতলার ন্যাড়ামাথায়
উকুন মাফিক মানুষ
বেরিয়ে থাকা ন্যাংটা শিক
কাকে চ্যালেঞ্জ করে

তিন দুগুনে ছক্কা ফেলে
লুডোর দান বাতিল
বস্তাপচা সিরিয়ালের
গন্ধ ছড়ায় ঘরে

টিনের চালে ছটপটিয়ে
গিরগিটিরা সাক্ষী দেয়
হাওয়ার দল হা হা করে
গরম বমি করে

অরিন্দম চন্দ্র

কালসাপ


স্বপ্নে মুখোমুখি আমরা-
অচিনপুরের সব ঘড়ি গলে যায়,
টুপটুপ করে খসে পড়ে
ঘন্টা,মিনিট,সেকেণ্ড...

তুই আর আমি সাদা-কালো
নিসর্গে হারিয়ে যাই,
সাপের দল ঘুরে ফিরে
মিলে যায় সবুজ আঁধারে...

দংশনে বড় বিষ তোর-
ঝিম ধরা স্মৃতিমেদুরতায়
ডুবে যেতে যেতে
একবার
শুধু একবার তোর মুখ দেখে নেই...

প্রদীপ কবীর খান

যৌনঅক্ষর

আমাদের পিঠ চাপড়ানো গুলো ছিল
অনাধিকার চর্চা ,
তবুও সময় পেলেই এ ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে সতেজ
রাখতাম রক্তের বেগ ,

সে সময় বুকের ওপর পা তুলে ঈশ্বর বিদ্বেষী
গুপ্ত অক্ষর সাজিয়ে সমাজচর্চা
মুধুচন্দ্রিমা বলতে যেটুকু ছিল - সে রাত এবং
মৈথুনকৃত কৃতার্থ একগাল গালি

আমাদের সংগ্রাম ছিল আমাদেরই রক্তের পূর্ব শক্তির সঙ্গে
জিন বিপর্যয় বুঝতে না পেয়ে
যত রাজা নামিয়েছি অক্ষরের কারাগারে

তারা এবং সময়
আমাদের ফেলে রেখে ছুটছে আর ছুটছে
এই যৌনঅক্ষর গুলো - দ্যাখ এখন সঙ্গী বিহীন

কাশিনাথ গুঁই

পঞ্চভূত

এমন কেউ কি হতে পারে না
ভালবাসা না দিক তবু
কাছে ডেকে করবে না ছলনা।
নিজের সময় কাটাতে খেলিয়ে
দিন অবসানে ছুড়ে দেবে না,
ময়দানের আঁধার কোণে সংগোপনে।
ভালবাসার আগুনে কলিজার রসরক্ত
ভেজে টোষ্ট বানিয়ে রিক্ত অংশটা
চাপা দিয়ে দেবে বঞ্চণার জঞ্জালে।
কেউ যদি এমন কোথাও আছে
কথা দিচ্ছি ভালবাসতে হবে না আমাকে
শুধু একবার কাছে এসে মুখ
তুলে তাকাবে আমার চোখে।
তারপর আমি হব ইতিহাস
ওই দৃষ্টিতে এক মহাকাব্য লিখে
মিশে যাব মহাকালের পঞ্চভূতে।

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

প্রতিদিন বিকেলের আলো


বিকেল ছোট হয়ে আসে…..
দুপুর
অল্প একটু আলো
ধীরে ধীরে সন্ধ্যে নামে
মনকেমন বিষন্নতা একপাশে পড়ে থাকে ।

এখন বিকেল নেই

ফুটবলের গায়ে লেগে থাকা রোদ
জানলায় উঁকি মারা লাজুক রোদ
স্কুল ফেরত বাস থেকে নেমে পড়া রোদ
ওরা সবাই দূরের কোন অফিসে কাজ করে ।

কেবল একটি রবিবার থাকে বিকেল দেখার

মানুষ আজিজ

একদিন বিষন্নতা


বহুদুর চলে গিয়ে ভাবছি
শূন্যতার ভেতর একদিন ক্রোধ জম্মায়
রটে যায় বহু দিনকার জমানো গল্প
বাজার হয়ে..
স্বপ্ন--শূন্যতার ভিতর বেফাস খুজে বেড়াই
বৃহৎ দগ্ধ হৃদয়ে নদীর কিনারায় বসে
অনুভব করি ,
বেচেঁ থাকার জন্য অনেক কিছুরই
প্রয়োজন ছিল,
যেমন এক খন্ড জমি এবং একটি শান্ত
নারীর হাত, একটি শিশু
অনেক সময় চলে যায়..কাটতে থাকে
মনের ব্যর্থ আবেশ
অতপর প্রতিদিনের মত..হাত বাড়িয়ে
সাহায্য চাই শক্তিহীন, অধম ইশ্বরের কাছে


তারপরও দেখা হবে


যদি দেয়ালের উপাশে থাক,
তারপরও দেখা হবে
যদি নিজেকে বহুদুর পাঠিয়ে দাও ,
তারপরও দেখা হবে
যদি আষাঢ়ের ঝড়ের রাতে আমাকে নাও চাও ,
তারপরও দেখা হবে
যদি বসন্তের ঘ্রাণ ছড়ানো সন্ধ্যায় একটু একা থাকতে চাও,
তারপরও দেখা হবে
যদি শীতের কুয়াশার ভিতরে আমাকে সঙ্গী করতে না চাও
তারপরও দেখা হবে
যদি বর্ষার ঝড় ঝড় দুপুরে ..অন্য জনের সুখের পন্য হও
তারপরও দেখা হবে
যদি হেমন্তের হাওয়ার রাতে..আমাকে দুশমন ভাব
তারপরও দেখা হবে
যদি তোমার.. চাদেঁর ছায়াকে,আকাশের মেঘকে, নদীর প্রতাপ কে ভালো না লাগে
তারপরও দেখা হবে
যদি পৃথিবী থেকে নীরবে/নির্জনে চলে যাও
তারপরও দেখা হবে
এবার বল পালাবে কোথায় তুমি? ধরা তোমাকে পড়তেই হবে,
বিশ্বাস কর তুমি তোমার বিবেক কে নিয়ে একদিন আমার সম্মুখে আসবে!!!!


জীবনে ভিন্নতা খুজি


ভোরের শিশির যখন আমার সময় পরিপূর্ন্য করে দেয়..
স্নিগ্ধ আকাশের দিগে..এক দৃস্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখি
কোন অভিমান নেই আকাশে
আকাশের মন আজ সুদ্ধ, সুন্দর
অনেক দিন থেকে আকাশের মত হতে চাচ্ছি
আকাশের মত উদার,প্রশার….
জীবনে ভিন্নতা খুজতে খুজতে
পৌছে যাই….সময়ের অন্য পৃষ্ঠায়
যেখানে ….ইশ্বর ও ভিক্ষুক...

শ্রেয়া দলুই

ঐশ্বরিক

“আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয় মাঝে
আর কিছুই নাহি চাই”
আমি দেখেছি তোমার রুপমণ্ডল
সীমান্তে গোধূলি নিয়ে,
রঙ মাখা ছবি
তবু তারি গভীর গোপনে
মননের আঁকিবুঁকি বলে
পেয়েছি তোমায় ছাপিয়ে সূর্য তারার
অনন্ত গতিবেগ
যে স্বপ্নরা আঠা হয়ে লেগে থাকে
মাকড়সার জালে সেখানে টালমাটাল
দ্বৈত সংঘাত ছিঁড়ে যাবে কি সুতার টান
এখনি পল্কা হাওয়ার বেগে ?
জাল তবু বুনে যাই নীরবে।।
আশ্চর্য ধোঁয়াশা; খানিকটা বেদনার ঘোর
চক্রব্যূহে গহীন অবচেতন;
দুর্গম সেই পথ তোমার কাছে যাবার
উজ্জলতার উচ্ছাসে বড় বেমানান অস্তিত্ব
তবু তার ঢেউ ছুঁয়ে যায় চোখের পাতা
গঙ্গার জল নিস্তরঙ্গ,
তবু স্রোত আছে অন্তরে
দুপাশের কান্না ভরা আলোর প্রতিফলনে
ঢেউ ওঠে তার কোলে;
কলঙ্কের ইতিহাস এ শহরের
এ জীবনের বস্তুমুখিনতা ;
তুমি ঢেলে দিয়ে যাও সে অমৃত কথা
কর্ণকুহরে শত সহস্রবার ধ্বনিত হোক
তার প্রতিধ্বনি
সে পারাপারের দক্ষিনাতে
আমার অভিমান গ্লানি মুছে যদি যায়
সেটুকু আশা জড়িয়ে ধরে বাঁচি।
তোমার একটু আশিসে ,
ধুয়ে যায় যদি সকল সঙ্কোচের নেশা
অন্তরমুখীনতা,
তবে মুক্ত করে আমায় কাছে টেনে নাও
তোমার দুবাহু ছুঁয়ে একবার
পেরিয়ে যাব এ মসৃণ অন্ধকার
ব্যর্থ মনস্তত্ত্ব ।
তোমার চরণে দেব অশ্রুজলের
আলো অঞ্জলিতে।
সে অসংযমী নিবেদনটুকু
পুজা বলে ফিরিওনা ।
ভালবাসার ধাপ কেটে তোমার বক্ষপরে
যত সব বৃক্ষ পেলো সূর্যমুখী রসধারা
তারি মূলে যত উষ্ণ প্রানকনা
দিয়েছ ঢেলে নিঃস্বেষ করে সংশয়,
অবিশ্বাসের সব মালা ছিঁড়ে
ফুলগুলো ফুটুক তারা হয়ে
হৃদয় আকাশের নীলে ।
বন্দী হওয়া চেতনায় লাগুক আগুন
মৃত ফল্গুকে যদি চিরন্তন বেগে
ধাইয়ে নিয়ে যায় কালের অনুশাসন,
তবে সে বিজয় অভিলাষী বীরোচিত
ভাব উন্মেষ ভেদ করে উঠুক
আমার নিস্তেজ আসক্তি
জীবনের পরে সফলতার পরে বিস্ময়ের পরে
অম্লান হোক তোমার নিরাকার প্রতিবিম্ব
আমার সরলতায় ।।

উদয়ভাণু

ডাকনাম

আমাদেরও ডাকনাম ছিল -
মেঘ নয় মেঘনাথ ,কপালে তিলককাটা ভানু কবিয়াল
গাড়োয়ান বিশু - শর্ষেগাছ মাথায় নিয়ে ফিরত যে ছেলে
কি যান নাম তার ? ভুলে গেছি ---
একদিন ডাকনাম ছিল

বিশুদ্ধ অক্ষরে কেই বা কার নাম ধরে ডাকে !
কেই-বা মনে রাখে স্মৃতির মত যে স্মৃতি নয় তাকে - , রোদে -জলে
ঘামজ্বরে - কাজে - অকাজে
যারা মরে - বেঁচে থাকে বেছে নিতে আলনার পুরনো জামা
ঝুল বারান্দা থেকে সূর্য উত্তাপ
তারাও ভুলে গেছে
একদিন ডাকনাম ছিল

মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস

আগুন আর ক্ষয়ে যাওয়া ডানার পাখি


মানুষ দেখলেই ইদানীং পরিচিত মনে হয়,
মনে হয় আরে এইতো সেই
যাকে আমি খুঁজেছিলাম বহুদিন আগে,
যে ছিল আমার অতি আপন
সযত্নে পুষে রাখা মন পাখিটির মতন।
না কোন ভুল নয় হয়ত সেই ছিল
যখন ছিলাম আমি মৃতের মত জীবিত
কিংবা নেশাগ্রস্থদের মতো ঘুমন্ত।
তখন সে এসেছিল আমাকে জাগাতে বা
মধুর স্বপ্নের ভেতর আমাকে রাগাতে।

আমাদের বাবা চাচারা বা তাদের দাদারা
বা তাদের দাদাদের পর দাদারা কোন এককালে
প্রাণপ্রিয় বন্ধু ছিলেন বা ছিলেন আপন দু ভাই
যেন একই শাখায় সদ্য-জন্মানো দুটো কুড়ি।

তখন হয়ত আগুন ছিল
কিন্তু আগুন তখনো পুড়াতে শিখেনি মানুষের ঘর,
তখন হয়ত পাখিও ছিল কিন্তু পাখিও জানত না
আগুনে পুড়লে ডানা আর অক্ষত থাকে না।

তখন আগুনে পুড়লে মানুষটির ঘর
তাকে কভু কি আর আমার আপন মনে হতো,
আমার ফাগুনেও সে আগুন দিয়ে জয়োল্লাসে নামত।
পাখিটিও তার ক্ষয়ে যাওয়া ডানার শোকে
হরতাল বা অনশন ডেকে বিলাপ করত।
আর আমি ১৪৪ ধারার ভয়ে চায়না তালায়
দিতাম আরেকটি মোচর ।

সুজন ভট্টাচার্য

দিনের কথায়


হাতের মুঠোয় নাই বা আকাশ থাকলো
তোমার দিন
রাতের কোনায় থাকলো কখন গহন
চেনার ঋণ।
জীয়ন-কাঠির সুর খুঁজে পায় দখিন
সকাল-নদী
সময় ঘণায় মেঘের ছোঁয়ায় কাজল
বিষাদ যদি।
চোখের তারায় হাত পেতে চায় একটি
ভোরের আলো
কেমন সেদিন উজান গাঙ্গের বিমল
সুরেই ঢালো।
ছুটছে অচিন পাড় ভেঙে সেই নদীর
গতির ধারা।


দুপুর বেলায় নিজেই চেনায় কেমন
ভাঙছে কারা
সেদিন ছিলাম নিজের পথেই চেনার
বাঁধন পিছে
নদীর বাঁকের হাজার পাকের কথায়
স্বরূপ মিছে
হঠাৎ চেনায় পথ মিলে যায় মনের
ভাষায় জানা
সময় মোড়ের নতুন ভোরের আলোয়
জীবন চেনা।

কামরুল হাসান মামুন

নৃপেন ঘোষের ভোটাধীকার

এবার আমি প্রথমবার

ভোট দিয়েছি এক কাল পর্দার আড়ালে;
আমার মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করেছি।
আমার প্রশ্ন জাগে আমি স্বাধীন কিনা-
এ আমার মৌলিক অধিকার কিনা?
আমি কাল পর্দার আড়ালের চাইতে সবার সম্মুখে
আমার স্বধীন মতামত
আমার ভাললাগা
আমার প্রতিনিধী
জানিয়ে দিতেই বেশি আগ্রহী।
শুধু আমি স্বাধীন নই বলে-
আমার ভোটাধীকারে গোপনীয়তা।
শুধু আমার নিরাপত্তার অভাব বলে
আমি অঘোষিত দায়বদ্ধ বলে
রাষ্ট্র আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছে।
এক কাল পর্দার আড়ালে- নিরাপত্তা....!
শীষ, নৌকা, লাঙল কিংবা হাতুড়ী
প্রতীক বেছে নিতে কোন অসুবিধা হয়নি!

আমি অবাক হই- যখন মনে হয়

আমার মনোনিত- নির্বাচিত
কী পরাজিত কেউ জানেনি।
সুতরাং আমার প্রার্থী তো নির্বাচিতই।
সত্যিই নিখুঁত নিরাপত্তা...

কিন্তু এই যে ‌‌‍"নিখুঁত" শব্দটি

তা আমার জন্য নয়।
আমি যে নৃপেন ঘোষ।
আমার বাবা রবীন্দ্র ঘোষ।
আমার সংশয় জাগে
এই যে নিখুঁত নিরাপত্তার কাল পর্দা-
প্লেইন কিংবা টুইল বুননীতে বুনা-
এর দুই সুতার মাঝের বন্ধনীতে
অতি সূক্ষ ফাঁক থেকে যাওয়া আবশ্যক।
কাজেই ইব্রাহীম মল্লিকের কর্মী মতিউর
আবার সীল-সম্বলীত প্রতীকটা
দেখে ফেলেনিতো?
দেখলেও খুব একটা চিন্তার ছিল না
আমি যদি শামীম মন্ডল কিংবা মাসুম বিল্লাহ্ হতাম।
যাক- এতসব দেখে আমার কাজ নেই।
তার চাইতে বরং আমার দু'বছরের ছোট স্বরসতী ঘোষ-
তার স্কুলে যাওয়াটাই বন্ধ করে দিই।
বাবা অনেক সাধ করে রেখেছিলেন-স্বরসতী;
হবে বিদ্যায়-বুদ্ধিয় অনন্যা।
এবারই আমার প্রথম ভোট প্রয়োগ
এবং স্বরসতীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ!

এতে বরং ক্ষতি নয়- লাভই হল

এক. আমার চিন্তা-মুক্তি
দুই. বঙ্গীয় নারীর ঐতীহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা!

এতেই কি মুক্তি পাওয়া যাবে-

অঘোষিত দায়বদ্ধতা থেকে-
গেছে-? (আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি;
একি উত্তেজনা(!)-
নিজের ব্যর্থতাকেই ফিরে ফিরে দেখা)
আমার বাড়ির বাংলা ঘরটি- মতিউর,
শামীমদের হাত থেকে কিংবা
স্বরসতীর ইজ্জত- মায়ের চোখের সামনে
রক্ষে হয়নি।
আমি বাড়ি ফিরে দেখেছি
বোনের লাশ(আত্মহত্যা) আর
মায়ের অশ্রু-শুন্য চোখ।
নিজের প্রতি আমার ধিক্ জাগে-
এসব আমারই জন্যে।
আমাকেও বাড়িতে পেলে আমার প্রান নিয়ে-
তবুও যদি স্বরসতীর ইজ্জত
কিংবা মায়ের চোখের জল না শুকাতো...।

এসবকে আমি সন্ত্রাসবাদ বলব

সে সাধ্য কই! শুধু বলব-
এসবের নাম যদি স্বাধীনতা হয়
তবে কি দরকার এরিস্টটল, লিঙ্কন
প্রমূখ রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের বস্তা-পঁচা স্বধীনতার
সংজ্ঞা জেনে? এ বাংলায়
স্বধীন চেতা মানুষের অভাব নেই!

সব হারিয়েছি বলে রাষ্ট্রের প্রতি অভিযোগ নেই।

অভিযোগ আমার বাবার প্রতি
বাবা নির্বোধ ছিলেন এবং আমি তার আদর্শে মানুষ বলে
আজও আমি নৃপেন ঘোষ।
আজও আমরা সংখ্যালঘু।

আজম মাহমুদ

চন্দনে রাঙা তরবারী


চন্দনে রাঙা তরবারী আমার শরীরের উপাদেয় অস্ত্র- তোমাকে দেখলেই খাপখোলা
তলোয়ার। অথচ আর কোনও বনে গিয়ে হরিণ শিকার ভুলে যায়। কোন মতেই নাঙা তরবারী
ক্ষেপে ওঠে না। সেই তলোয়ার হারালো গন্ধটুকুও তোমার শরীরের। আর কি করে
বেঁচে থাকার উপযোগীতা অবশিষ্ট থাকে! সবকিছু হারিয়ে যদি বজায় থাকতো রাঙা
তরবারীর জৌলুস!

আজ তুমি হারিয়েছো- মানে সব হারিয়েছে। আমার খাপখোলা তলোয়ার এখন নিরিহ
প্রজাপতি! চন্দনে রাঙা তরবারী লুকিয়ে রাখি সযত্নে যদি কোন দিন তোমার
শরীরের চেনা গন্ধ ফিরে আসে...


সব বোঝ, মন বোঝ না



স্বপ্নে পরিপক্ষ বাতাসের বীজ আলো অন্ধকারে ডুব দিয়ে ফিরে যাওয়া হৃদয়ের

রূপালী চত্ত্বরে। বিরামহীন পথপরিক্রমায় চর্ব্বিত চয়ন উল্লাস দিকভ্রমণ
সমাজসেবার নায়কগণ। বারবার টেনে নিয়ে যায় আক্ষরিক সফলতায়- কোন মন ভাঙ্গে,
পোড়ে বৃথাসব চিন্তাফলক। এরপর যুগযুগ কষ্ট আর কান্না বাতাসে ভর করে ঘুরে
ফিরে কানে কানে।

একবার ভেঙ্গে দিলে, জোড়ানোর প্রচেষ্টা নেই এতোটুকু। নায়কমন (নায়িকামনও)

ঘুনলাগা আসবাবের মতো চৌচির ভেতরে ভেতরে। অনায়াসে যেই মন পূর্ণ করা যেতো-
কি গভীর কষ্টে ক্ষয়ে ক্ষয়ে ব্যথায় ব্যথায় কাটায় সারাজীবন।

আলেক সাই

শালুক চোখের সন্ধ্যাভাষা

চাপাকষ্টে সবুজের হলদে রঙের কষ্ট বুঝি
কোন প্রহারে রক্ত ভাঙ্গে তাও বুঝি
বিজন রাতের লিপস্টিকের অর্থ বুঝি
জগতের যতসব ইজম আছে তাও বুঝি
গান -কবিতা -পেইন্টিং বুঝি
সংবেদনশীল হৃদয় বুঝি
রাজনীতির কপটতা বুঝি
গ্যালাক্সি বুঝি ,আইনস্টাইন-নিউটন বুঝি
থিউরি অব রিলেটিভিটি বুঝি
ধর্ম আর ধর্মান্ধতা বুঝি
প্রিয়, এত্তো এত্তো কিছু বুঝি
তারপরেও
বুঝি না তোমার শালুক চোখের
সন্ধ্যাভাষা ।


ধ্যানভাঙ্গানি

আমি তো বরাবর জেনে এসেছি
পদার্থ আমি।বেজায় রকম বেমানান এই পৃথিবীর ।

নিজেকে অপাংতেয় ভাবতে ভাবতে যখন ফুল নদী পাখির সাথে আমার গভীর ভাব তক্ষুনি তোমার নামটি ফুল নদী পাখির সাথে যোগ হলো ।

একমাত্র তুমি ই বুঝতে পেরেছ কেন যে ভেঙ্গেচূড়ে যায় আমার ভিতর-বাহির
ভাবি,তুমি ছাড়া কে করবে আর আমার ভাঙ্গাচূড়া জীবনের নিঁখুত মেরামত।
খাজুরাহো মন্দিরের দেবী তুমি এসে কিনা বললে
শংকর ধাতুতে গড়া চমৎকার শরীরে আমি নাকি মারবেল পাথরের সৌধ।

অথচ
বড় আর্দ্র ,নরম হৃদয় নাকি আমার ।

সেদিনের বরষার ঘনঘোর রাতের মাতাল করা মুখর প্রহরের স্পর্শের প্রাঞ্জল
ভাষা ত্বকের প্রাচীর পেরিয়ে আরো গভীরে গিয়ে বেজেছে ।
আমি বুঝেছি । তুমি বুঝেছো কি?
বুঝে যদি থাক তাহলে যেই উদ্দেশ্যে তুমি সন্নাসীর
ধ্যান ভেঙ্গেছো সেই উদ্দেশ্যে সফল করো ।

অভিলাষা

সাধের একতারা


একতারাটির একটি তারে
সুর ঘনালো ভুবনপারে,
গাইছে মাটি, সবুজ বন,
উদাস মেয়ের লাজুক মন।
উড়ছে সে সুর দমকা হাওয়ায়,
রঙ গোধূলির স্বপ্ন মায়ায়।
হারিয়ে ফেলা স্মৃতির মতো,
গুঞ্জনসুর জমছে যত,
রুক্ষ প্রানের মরুর বুকে,
ছাইছে সে সুর মহাসুখে।
পাখীর ডাকে, অলির ডানায়,
ফুলেরকলি, পরাগদানায়
বৃষ্টিধারায়, নদীর স্রোতে,
সুর খেলছে একতারাতে।
বনবাদাড়ে, নদীর কূলে,
মাঠে ঘাটে তরুমূলে,
দুপূর রোদে আলো ছায়ায়,
সুজন বাউল সুরকে সাজায়।
শুকতারাটির বুকভরা গান,
গাইছে সুরে বাউল পরান।। 

মামনি দত্ত

অর্ধেক পৃথিবী


ভাঙ্গা ঘরের এক কোনে ডাঁই করে রেখেছি ছাই
হয়ে যাওয়া বস্তাপঁচা স্মৃতি!
অন্ধকার ছড়িয়ে আছে দেওয়াল জুড়ে, মন পুড়ে যায়
যজ্ঞাগ্নিতে।
হলুদ পাখি টা কবে উড়ে গেছে, শূণ্য খাঁচায় ঘূর্ণি পাক খায়
স্মৃতির গন্ধমাখা লগ্ন,
আমি ছুঁয়ে দেখিনি, আঘ্রানে বুঁদ হয়নি, শুধু ডুবে গেছি করাল
স্পর্শ থেকে পালাতে চেয়ে!
তীক্ষ্ণ আচড়ে রক্তাক্ত হতে হতে, এক বার শ্বাস নেওয়ার
লোভে মাথা তুলেছি,
ভুলেছি কেন্দ্রবিন্দুতে স্মৃতির উপস্থিতি,
তিলে তিলে ক্ষয়ে যাচ্ছে ফাগ ওড়ানো ফাগুন!
প্রাণহীন ঘরের জান্তব দীর্ঘশ্বাস
ছাইচাপা আঁচে ধিকিধিকি জ্বলে,
ছাইয়ের মধ্যেই অমূল্য রতন আছে, আজও
সবাই বলে!!!


সুবর্ণা গোস্বামী

আহ্বানে এসেছিলাম


ভীষণ ইচ্ছে ছিল তবুও
অপেক্ষার প্রাচীর ভেঙ্গে ছুঁইনি তোমাকে
রাত্রির নির্জনতায় তোমার যে আবাহন
তারই ধ্বনির তৃষ্ণায় মর্ত্যে আগমন
ওভাবে ডাকলে কেউ না এসে পারে!
এসেও তবু অপেক্ষমাণ দরজার বাইরে।
যে ভালবাসায় ডেকেছ
বাহুবন্ধনে সেই প্রেম যদি ব্যাকুলতা হারায় !
সারারাত্রি জুড়ে জ্বরতপ্ত গায়ে
তোমার দ্বারপ্রান্তে রুদ্ধ আমি অজানা আশঙ্কায়।
আলোর স্পর্শ পেয়ে চলে যাচ্ছি শিশিরের মত
দূর দেশ থেকে আনা শিউলিমালাটিকে
তোমার চরন প্রাপ্তির অপেক্ষায় রেখে।


এখানেও বৃষ্টি আজ


আজ আমার এখানেও বৃষ্টি
বুঝি প্রকৃতি বুঝেছে অবুঝ কাতরতা
অন্তর মথিত করে হাহাকার আসে
সপ্তডিঙ্গায় পসরা সাজিয়ে বেদনা।


আজ বৃষ্টিতে ভিজেছি আমিও
ইচ্ছেতে নয় আবার অনিচ্ছেতেও নয়
যেন অন্তরালে ছিল একবুক জলের প্লাবন।
তোমার অন্ধকারে আলো হবার একটুকরো অপেক্ষা।

আজ আমারও শরীরে শীত,উষ্ণতার আহ্বান
উজানে বিরুদ্ধ প্রেম,আকাশে বৈরী মেঘমালা
আশ্চর্য মাধুরি ছড়ায় বিষণ্ণ আকাশ।

তোমাকে ঘিরে থাকা আমার সমস্ত সত্ত্বা
দুর্বোধ্যই থেকে গেল আকাঙ্খিত আষাঢ়ে।


আবু হানিফ

জিঙ্গো


যুগযুগ খুজিলাম যারে
নাম না জানা পাখির ভিরে
আমাবসশার আধারে
বসন্তে গোলাপের বনে
শেফালি পদ্দের দলে
বসন্তের দখিনা পবনে-কত অচেনা বন উপবনে
বহুকাল খুজেছি তারে।
হেমন্তের সকালে, মধ দুপুরে, পড়ন্ত বিকালে।
গুটা বসুধার আনাচ-কানাচ ঘুরে
আবার এসেছি ফিরে-
সেই লজ্জাবতী পলাতকা প্রিয়ার গোপন ডাক শুনে।



পীযূষ ভট্টাচার্য

স্বপ্নের নারী


দেখেছি স্বপ্ন, দেখেছি আগুন,

দেখেছি তোমায় অপরুপ দেখেছি।
দেখেছি বিকানির পরস,
দেখেছি স্বপ্ন দেখেছি তোমায়,অঙ্গ রোদের খেলায়।
দেখেছি সুরঙ্গ দেখেছি পাহাড়,
দেখেছি তোমার রুপের বাহার,
দেখেছি দর্প, দেখেছি অগুন ঝরানো বদন সর্গ দেখেছি।
বৃষ্টির তলে ও ভাসতে দেখেছি,
শোকেসে ঢাকা গয়না ও দেখেছি,
দেখেছি তোমায়, স্বপ্ন দেখেছি, তোমায়,
তোমায়, তোমাকেই শুধু তোমাকেই দেখেছি।।